মানিকগঞ্জে মাসে দুই কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেও এক যুগ ধরে গ্যাস পাচ্ছেন না তিতাসের অন্তত ১০ হাজার গ্রাহক। নানাভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে গ্যাসের জন্য বিল দিয়েও অন্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্যাস না পাওয়ায় গ্রাহকরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। কেউ সিলিন্ডার কেউ বা আবার লাকড়ি দিয়ে রান্নার কাজ সারছেন। গ্যাস না পেয়েও দীর্ঘদিন ধরে বিল পরিশোধ করে আর্থিক ক্ষতির মুকে পড়ছেন গ্রাহকরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের একজন শহরের উত্তর সেওতা এলাকার বাসিন্দা শিউলি খান। তার ফ্ল্যাটে গ্যাসের দুটি চুলা রয়েছে। কিন্তু গ্যাস না থাকায় চুলা জ্বলছে না প্রায় এক যুগ ধরে। রান্নাসহ গৃহস্থালির কাজে মাসে তার তিনটি সিলিন্ডার গ্যাস লাগে। তিতাসের গ্যাস না পেলেও মাসে বিল পরিশোধ করতে হয় ঠিকই। এতে সংসারের খরচ বেড়েছে।
আন্না বেগম নামে এক গৃহিণী জানান, চুলায় গ্যাস না পাওয়ায় রান্না ও খাওয়া-দাওয়া অনিয়মিত। বাড়তি খরচের ভয়ে এলপিইজি গ্যাস হিসেব করে ব্যবহার করতে হয়। এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়?
Advertisement
শহরের জেপি প্লাজার ম্যানেজার মোসলেম মিয়া জানান, তাদের ভবনে ২২টি চুলা আছে। প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। অথচ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। চুলায় গ্যাস দিতে না পারলেও বকেয়া পড়লে বিলের জন্য তিতাস কোম্পানি তাদের চাপ দেয়। গ্যাস সংকটের কথা বললে স্থানীয় অফিস জানায় তাদের কিছু করার নেই।
জেলায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে নানা সংগঠন। ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাবিতে বের হওয়া মিছিলে পুলিশের টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হন মানিকগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মো. রমজান আলীসহ বেশ কয়েকজন। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়নি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুন্নবী তুলিপ জানান, গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের। কিছুদিন রেশনিং পদ্ধতিতে বাসাবাড়িতে গ্যাস দেওয়া হতো। এরপর সরকারি ছুটির দিনগুলোতে গ্যাস মিলতো। মাঝে মধ্যে ঈদের সময় গ্যাস পাওয়া যেতো। কিন্তু প্রায় ১২ বছর ধরে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি আরও জানান, প্রতিমাসে দুই কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেন এখানকার গ্রাহকরা। অথচ, তারা গ্যাস পান না। বিষয়টি নিয়ে তিতাস, পেট্টোবাংলা এবং জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। করা হয় মতবিনিময় সভাও। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।
Advertisement
তিতাস গ্যাস সূত্র জানায়, পৌরসভাসহ মানিকগঞ্জে গ্যাস সংযোগ ছিল প্রায় ১২ হাজার গ্রাহকের। গ্যাস না পাওয়ায় দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ১০ হাজার।
এ বিষয়ে তিতাসের মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী জানান, অল্প কিছুদিন হয় যোগদান করেছি। এসেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। কয়েকদিন আগে তিতাস গ্যাস কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছিল গ্রাহকরা। একাধিক পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
বিল নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সংযোগ চালু হওয়ার পর গ্রাহক হিসেবে ডাটা এন্ট্রি হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি গ্রাহক এবং টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে গ্রাহক চাইলে আবেদনের মাধ্যমে যে কোনো সময় তার সংযোগ কেটে দিতে পারেন।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে একটি সোলার বিদুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে আসলে গ্যাস আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
পরে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, জ্বালানি সচিবের কাছে গিয়ে এখানকার গ্যাসের পরিস্থিতি জানবো। এরপর এটা কী করা যায় সে বিষয়ে বসবো। আমরা যতটা সম্ভব জনপ্রত্যাশাকে পূরণ করবো।
বি.এম খোরশেদ/জেআইএম