দেশজুড়ে

যশোরে অর্ধকোটি টাকা ফেরত পেতে স্মারকলিপি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. এনামুল হকের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। যশোরের মণিরামপুরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে এই ঘুস নেওয়া হয় বলে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। ঘুসের অর্ধকোটি টাকা ফেরত পেতে শিক্ষা উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষকদের পক্ষে যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেন মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাঠি দারুল উলুম মহিলা আলিম মাদরাসার শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০২২ সালের মার্চ মাসের শুরুতে মণিরামপুর উপজেলার মণিরামপুর মহিলা আলিম মাদরাসা, হাজরাকাঠি মহিলা আলিম মাদরাসা, ডুমুরখালি দাখিল মাদরাসা, মনোহরপুর দাখিল মাদরাসা, বালিধা-পাঁচাকড়ি দাখিল মাদরাসা, রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজীআলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অডিট করেন ড. এনামুল হক।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, পরিদর্শনকালে ওই ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর পুরো এক মাসের বেতনের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুস নেন তিনি। ঘুস নেওয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ১২ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস ও আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষাভবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ড. এনামুল হকের কার্যালয়ে অভিযান চালান। পরে দুদকের সেই তদন্ত আর এগোয়নি। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা তৎপর হওয়ায় ওই কর্মকর্তার (ড. এনামুল) অনুসারীরা পেনশন আটকে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করাতে বাধ্য করেন। ওই সময় ‘আমরা ঘুস দেয়নি মর্মে প্রস্তুত করা চিঠিতে’ সইও করিয়ে নেন।

Advertisement

স্মারকলিপিতে বলা হয়, অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষকরা যা বেতন পান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। তারপরও মাস শেষে হাতে গোনা বেতনের টাকা উত্তোলন করে সংসারের কেনাকাটা, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও ঋণের কিস্তি দেন। কিন্তু সেই টাকাগুলো জোরপূর্বক ঘুস দিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ড. এনামুলের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং স্বামীর অবৈধ টাকার জোরে দুবার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি নিয়ে দীর্ঘকাল ডিআইয়ের একই চেয়ারে বসে সারাদেশের শিক্ষকদের জিম্মি করে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই টাকায় এলাকায় শত’ শত’ বিঘা আমের বাগান ও মৎস্য খামার, ঢাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ড. এনামুল হক যশোরে এসে একটি রেস্ট হাউজে উঠে ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে দেখা করতে বলেন। এরপর সরাসরি বলেন, ‘আপনাদের অনেক ফাঁক-ফোকর আছে। প্রকৃত অডিট হলে কারো বেতন বন্ধ হবে, কারো পেনশন আটকে যাবে, কারো চাকরিও যাবে। এজন্য আপনারা সবাইকে (সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের) বলে দেন বাড়াবাড়ি না করে এক এমপিও (এক মাসের বেতন) দিতে, বাকিটা আমি ঠিক করে নেবো।’

ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, এরপর গভীর রাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে নাস্তা ও ১০-১২ রকম খাবারের মধ্য দিয়ে আপ্যায়িত হয়ে আজব অডিট সম্পন্ন করেন। তিনি অডিটকালে ঘুস কোথায় কোথায় ভাগাভাগি হবে সেটাও বলে গেছেন যা রেকর্ড আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতায় দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার এবং প্রতিবাদ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য শিক্ষকরা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক ঘুসের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে মানবিক আবেদন করছি।

Advertisement

মিলন রহমান/জেডএইচ/জেআইএম