প্রথমে ৮০ কোটি টাকা। এর পর ৯৮ কোটি। সর্বশেষ ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট বেড়েছে দুই দফা। সংস্কার কাজের বাজেট যেমন দফায় দফায় বেড়েছে, তেমন বেড়েছে প্রকল্প শেষ হওয়ার সময়ও। ২০১৭ সালে যখন ৮০ কোটি টাকা বাজেটে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), তখন কাজ শেষের সময়সীমা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর।
Advertisement
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়াম সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনলে বাজেট বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯৮ কোটি টাকা এবং কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের জুন। পরে কাজ শেষ করার সময় আরো ৬ মাস বাড়িয়ে করা হয়েছিল ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর। শুরুর পর কাজ আবার থেমে গেলে বাজেট ও প্রকল্পের সময় আরো বেড়েছে। ৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বাজেট বেড়ে ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি হয়ে চলে যায় এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর।
বর্ধিত বাজেটের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর বাকি কাজের দরপত্র শেষে দুই মাস হাতে রেখে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তখন লক্ষ্য অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার। তবে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং দেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে।
এসব অজুহাত দেখিয়ে প্রকল্পের সময় যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প সমূহের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ক্রীড়া উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে সভা করেছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেখানেই তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংস্কার কাজ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সভায় প্রকল্প পরিচালক চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি কাজ আন্তর্জাতিক মানের সাথে মিল রেখে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টাকে।
Advertisement
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগসূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পাওয়া ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের ৩৯ কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে, যা বরাদ্দের ৯৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রকল্প শুরু হতে এ বছর জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫৯ দশমিক ২০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ কাজ চলমান।
বর্ধিত বাজেটের বরাদ্দ পাওয়া ৬০ কোটি ৮ লাখ টাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ ফ্লাডলাইট। আধুনিক ফ্লাডলাইট স্থাপনের বাজেট ৩৮ কোটি টাকা। গ্যালারির শেড স্থাপনের জন্য প্রথম দরপত্র ছিল ২৯ কোটি টাকার কিছু বেশি। দ্বিতীয় দরপত্রে যোগ হয়েছে আরো ১০ কোটি টাকা। স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারিতে শেড স্থাপনের জন্য ব্যয় হবে ৪০ কোটি টাকার মতো। বর্ধিত বাজেটের অন্য কাজগুলোর মধ্যে আছে ৪ কোটি টাকার চেয়ার এবং স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তা, সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ আরো কিছু কাজের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
প্রথম ৯৮ কোটি টাকার মধ্যে বড় কাজ ছিল অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক। ২০ কোটি টাকা বাজেট ছিল এই কাজে। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক নির্মাণ শেষ হয়েছে আগেই। এরই মধ্যে নতুন ট্র্যাকে খেলাও শুরু হয়েছে। মাঠ প্রস্তুতের জন্য বাজেট ছিল ৬ কোটি টাকার মতো। তবে এই মাঠ প্রস্তুতের কাজ নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। বাফুফে বলছিল মাঠের কাজগুলো তাদের চাহিদামতো হয়নি। বিশেষ করে মাঠের সীমানা ও অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের মধ্যে অপর্যাপ্ত দূরত্ব, মাঠে পানি দেওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্র নিয়েই বেশি আপত্তি ছিল বাফুফের। পরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রের পরিবর্তে ১২ টি পয়েন্টে পপআপ সিস্টেম করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সংস্কার প্রকল্পের অন্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- ড্রেসিংরুম আধুনিকায়ন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন, মিডিয়া সেন্টার তৈরি, টিকিট কাউন্টার, ডোপ টেস্ট রুম তৈরি, চিকিৎসা কক্ষ, ভিআইপি বক্স নির্মাণ, প্রেসিডেন্ট বক্স, টয়লেট উন্নয়ন ও সাব-স্টেশন তৈরি।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ মোট ২৫টি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প, প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য খেলার মাঠ ও প্যাভিলিয়ন ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং কয়েকটি জেলা স্টেডিয়াম নির্মাণ ও মানোন্নয়ন প্রকল্প।
আরআই/এমএমআর/জেআইএম