দেশজুড়ে

জাল সনদে ১৫ বছর শিক্ষকতা, দুই বছরের কারাদণ্ড

চুয়াডাঙ্গার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদ দাখিল করে চাকরি করার অপরাধে খাইরুল ইসলামকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও সাতদিনের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. লুৎফর রহমান শিশির এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামি খাইরুল ইসলাম।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে খাইরুল ইসলাম ২০০২ সালের ১ আগস্ট যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় যে, তার দাখিল করা সনদপত্র জাল। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জাল সনদপত্র দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে পারে এ সংশয়ে তিনি বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও বিজিবি পরিচালক বরাবর ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল আবেদন করে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন।

এ পর্যন্ত থেমে ছিল বিষয়টি। এরপর হঠাৎ করে খাইরুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিসেস মেহজাবিনের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এ মামলাটি তদন্ত করেন সেই সময়ের সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ওহিদুল ইসলাম।

Advertisement

তিনি মামলাটি তদন্ত করে আদালতে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি মামলার বাদী খাইরুল ইসলামের দাখিল করা মামলা সাজানো, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন এবং মিথ্যা মামলা করায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ২১১ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রার্থনা করেন। সেই সঙ্গে চাঁদাদাবি ও গ্রহণ করার স্বপক্ষে কোনো সাক্ষী বা প্রমাণ না পাওয়ায় বিবাদী চুয়াডাঙ্গার গুলশানপাড়ার গোলাম ফারুকের স্ত্রী ও মরহুম মহিউদ্দিনের মেয়ে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহজাবিনকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানান। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল আদালত মেহজাবিন চন্দনাকে বেকসুর খালাসের আদেশ দেন।

তারপর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সভাপতির পক্ষে মেহজাবিন বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৬ জুন চুয়াডাঙ্গা চিফ জুডিসিয়াল আদালতে খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলার স্বপক্ষে বিদ্যালয়ে চাকরি গ্রহণের সময় খাইরুল ইসলামের দাখিল করা জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নট্রামস) জালসনদ উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে বেতন হিসেবে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪ টাকা গ্রহণ করায় ২০১৭ সালের ১৮ জুনে করা লিগ্যাল নোটিশের কপি প্রাপ্তি স্বীকার রশিদসহ সংযুক্ত করা হয়।

এছাড়া ২০১৭ সালের ৬ মার্চ খাইরুলের চাকরির সময় জমা দেওয়া সনদপত্রটি যাচাইয়ের জন্য বগুড়া ফুলতলায় অবস্থিত নট্রামস পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ একাডেমির পরিচালক (উপসচিব) এস.এম.ফেরদৌস আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়, খাইরুল ইসলামের সনদপত্রটি নট্রামস কর্তৃক ইস্যুকৃত নয়, সনদপত্রটি জাল ও ভুয়া।

মামলাটি তদন্ত করেন তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। ওই তদন্ত করার জন্য তিনি খাইরুলকে তার সনদপত্রের মূল কপি দেখাতে বললে তিনি জানান, ‘দাখিল করা সনদপত্রটির কপি তার নয়। তাকে ফাঁসানোর জন্য ওই কপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে’। এরপর তাকে তার সঠিক সনদপত্রের ফটোকপি জমা দিতে বললে খাইরুল আবার সনদপত্র জমা দেন। যার সিরিয়াল নম্বর-১৩৫৯০ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৩৫৮৭। এই সনদপত্রটি যাচাইয়ের জন্য আবারো জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমিতে পাঠানো হলে সেটাও জাল প্রমাণিত হয়।

Advertisement

এই মামলাটির অনুসন্ধান করে জানা যায়, খাইরুল ইসলাম ভুয়া সনদপত্র দাখিল করে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

এ মামলাটি কোয়াশমেন্ট চেয়ে খাইরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে মামলা করেন। যা পরে বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি কে.এম.এমরুল কায়েশ এবং ওই বছর ১২ জুলাই ও সবশেষ ১৯ জুলাই বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের আদালতে উপস্থাপিত হয়ে কোয়াশমেন্ট চাইলে তা বাতিল হয়। এর ফলে নিম্ন আদালতে মামলাটি চলমান থাকে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাড. শরিফ উদ্দীন হাসু বলেন, সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদপত্র দাখিল করে চাকরি করার অপরাধে খাইরুল ইসলামের দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে সাতদিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

হুসাইন মালিক/জেডএইচ/জেআইএম