আইন-আদালত

পাঁচ রাজাকারের দণ্ড জাহানারা ইমামকে উৎসর্গ

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের যে দণ্ড হয়েছে তা শহীদ জননী জাহানার ইমামকে উৎসর্গ করেছেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সীমন বলেন, আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন। আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই পবিত্র দিনে তার আত্মা শান্তি লাভ করবে। আমার বিশ্বাস, একাত্তরের যেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এই রায়টি আমরা আমাদের শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে উৎসর্গ করতে চাই।মঙ্গলবার সকালে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান ও হাফিজ উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড এবং রাজাকার আজহারুল ইসলামকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন কেবল শামসুদ্দিন আহমেদ। বাকিরা পলাতক। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আইজিপির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে রায়ে। দণ্ডিতরা একাত্তরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেপুর বিল, কিরাটন বিলসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটান, তা এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে।লেখক জাহানারা ইমাম (ডাক নাম জুডু) ১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আব্দুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা সৈয়দা হামিদা বেগম।১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমির ঘোষণা করলে দেশে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফী ইমাম রুমীর মা জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যের একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এর আহ্বায়ক। কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’ গঠন করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ‘নরঘাতক’ গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করে।গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম তার (গোলাম আযম) ১০টি অপরাধই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। ওই সময় জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির  এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘শহীদ জননী’ হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধে ছেলে হারানো এই মা।এফএইচ/এনএফ/এবিএস

Advertisement