দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর ছাত্র জনতার দুর্বার আন্দোলন, লড়াই-সংগ্রামে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটেছে আওয়ামী লীগেরও। দায়িত্ব নিয়ে দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। খুব স্বাভাবিকভাবেই পুরো দেশে চলছে পরিবর্তনের পালা।
Advertisement
শেখ হাসিনার স্নেহভাজন, আওয়ামী লীগের সাংসদ নাজমুল হাসান পাপনও আর বিসিবি প্রধান নন। পদত্যাগ করেছেন। পাপনের চেয়ারে বসেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। একইভাবে নতুন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দেশ বরেণ্য ক্রিকেটবোদ্ধা, বিশ্লেষক, সাকিব ও মুশফিকদের গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
পদত্যাগ করে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জালাল ইউনুস, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, নাইমুর রহমান দুর্জয়। এনএসসির কোটা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে। আর সর্বশেষ আজ বুধবার পদত্যাগ করলেন আরেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ থেকে এরপর পদত্যাগ করবেন কে? পদত্যাগী পরিচালকের তালিকায় সুজনের পরের নামটি বসবে কার?
Advertisement
সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ সমর্থনপুষ্ট, আওয়ামী ভাবাপন্নদের দিয়েই সাজানো ছিল বিসিবির আগের কমিটি।
খুব স্বাভাবিকভাবেই ২৫ জনের ওই পরিচালক পর্ষদে সে অর্থে অন্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী ছিলেন না বললেই চলে। তারপরও হাতে গোনা দু’তিনজন পরিচালক ছিলেন যারা সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন, আবার আওয়ামী ঘরানার লোক বলেও চিহ্নিতও নন, তারা মতাদর্শের পার্থক্য থাকা সত্বেও নাজমুল হাসান পাপন ও তার খুব ঘনিষ্টজনদের সাথে সম্পর্কের কারণে আগের বোর্ডে ছিলেন। এখন তাদের বোর্ডে থাকাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বিসিবিতে একটা পরিবর্তনের পালা সূচিত হয়েছে এবং নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড পরিচালক পর্ষদের হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া শেষ পর্যন্ত হয়ত আর কেউই থাকবেন না বা থাকতে পারবেন না।
এখন দেখার বিষয় এরপর কে বা কারা পদত্যাগ করেন? সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আ জ ম নাসির, শেখ সোহেল, গোলাম মোর্তুজা পাপ্পা, আহমেদ নজিব, মঞ্জুর কাদের, এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ও ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বোর্ডে থাকার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
Advertisement
এই পরিচালকদের কেউ গত কয়েকটির মধ্যে একটি মিটিংয়েও অংশ নেননি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা আপনা থেকেই সরে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বোর্ডের পরপর ৩টি সভায় অংশ না নিলে তাদের পরিচালক পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা।
এর বাইরে বর্তমানে সাবেক পরিচালক পর্ষদ থেকে আছেন মাহবুব আনাম, আকরাম খান, কাজী ইনাম, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমান মিঠু, মঞ্জুর আলম, সাইফুল আলম স্বপন ও সালাউদ্দীন। এখন তাদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে কে কে পদত্যাগ করেন? সেটাই দেখার।
ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন আছে, আকরাম খান, কাজী ইনাম এবং সাইফুল আলম স্বপনও পদত্যাগ করতে পারেন। যদিও আকরাম খান পদত্যাগের কথা অস্বীকার করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, জাতীয় দলের সফল পারফরমার ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
এটা ঠিক, আকরাম ক্যারিয়ারের বড় সময় আবাহনীতে খেলেছেন। আবাহনীর ক্রিকেট অধিনায়কও ছিলেন বেশ কয়েক বছর। অধিনায়ক হিসেবে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর পর আবাহনীর সফলতম অধিনায়ক হিসেবে আকরামকেই ধরা হয়। সর্বোপরি তিনি ৯৭’র আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দলের অধিনায়ক।
সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের সাথে অস্তিত্বের লড়াইয়ে আকরাম খানের বীরোচিত ম্যাচ জেতানো ইনিংস তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে চির স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে। তারপরও নাজমুল হাসান পাপনের ঘনিষ্টজনদের সাথে সুসম্পর্ক থাকা এবং বোর্ডের নানা স্থাপনা নির্মাণ কাজে জড়িত থাকার কারণে আকরাম খানের শতভাগ ক্লিন ইমেজে দাগ পড়েছে খানিকটা। যদিও তিনি নিজেকে এখনো শতভাগ ক্লিনই মনে করেন।
তার পদত্যাগের কোন সম্ভাবনা আছে কি না? পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে পরিচালক পদ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা মাথায় এসেছে কি না? আজ বুধবার জাগো নিউজের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম বলেন, ‘নাহ! আমিতো আর রাজনৈতিক পরিচয় বা পিছনের দরোজা দিয়ে বোর্ডে আসিনি। ক্রিকেটকে ভালবেসে, ক্রিকেটার হিসেবে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েই উঠে এসেছি। ক্রিকেট আমার ভাললাগা, ভালবাসা। আমার ক্রিকেট বোধ, জ্ঞান, খেলোয়াড়ী জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই ক্রিকেটের উন্নয়ন ও মঙ্গলে কাজ করেছি। করতেও চাই। এখনো এমন কোন পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটেনি যে পদত্যাগ করবো।’
কোনো মহল থেকে পদত্যাগের কোন চাপ আছে কিনা? জানতে চাইলে আকরাম খান সেটাও অস্বীকার করেন। বলেন, নাহ কোথাও থেকে পদত্যাগের কোন চাপ নেই আমার ওপর।
এদিকে পারিবারিকভাবে না হলেও বৈবাহিক সূত্রে আকরাম খান আর বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ আপন ভায়রা ভাই। আকরাম খানের স্ত্রী সাবিনা আকরামের ছোট বোনের স্বামী ফারুক আহমেদ। কাজেই ধরেই নেয়া যায় আকরাম খানকে বোর্ডে আগলে রাখার চেষ্টা করবেন ছোট ভায়রা ফারুক।
ওদিকে কাজী ইনামও রাজনীতিবীদ নন। ক্রিকেটকে ভালবেসেই সংগঠক। তবে তার আপন বড় ভাই কাজী নাবিল আহমেদ আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। এদের পাশাপাশি পাবনার সাইফুল আলম স্বপনের বোর্ডে থাকাও নিয়েও আছে সংশয়। শেষ পর্যন্ত তাদের কে থাকবেন, আর কে থাকবেন না? তা সময়ই বলে দেবে।
এআরবি/ আইএইচএস