দেশজুড়ে

নোয়াখালীতে দুই ফেরিঘাটের ইজারা ‘ভাগবাটোয়ারা’র অভিযোগ

নোয়াখালীতে নামমাত্র মূল্যে আন্তঃজেলার দুটি ফেরিঘাটের খাস আদায়ের ইজারা ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, এ বিষয়ে তিন সদস্যের কমিটি রয়েছে। তারা যাকে মূল্যায়ন করেছে আমি তাকে নির্বাচিত করেছি। কোনো অভিযোগ উঠলে কমিটি জবাব দেবে।

Advertisement

এছাড়া জেলা পরিষদের কর্মচারীরা নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি ছাড়া কাউকে আবেদন জমা দিতে দেননি। এতে সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর দক্ষিণ চর আলাউদ্দিন-চর পল্লবী থেকে সন্দ্বীপ উপজেলার হারিশপুর-কালাপানিয়া ফেরিঘাট এবং চেয়ারম্যানঘাট (বয়ারচর)-তমরুদ্দি-হাতিয়া ফেরিঘাটের নিয়মিত খাস আদায়কারী নির্বাচনের জন্য গত ১২ আগস্ট তাৎক্ষণিক ডাকের (ইজারা) পুনঃবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে আগ্রহীদেরকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর অনুকূলে এক লাখ টাকার পে-অর্ডার, তিন কপি ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ২৮ আগস্ট উপস্থিত হতে অনুরোধ করা হয়।

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, আন্তঃজেলা ফেরিঘাটের খাস আদায়ের ডাকের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. শামছুল আলমকে আহ্বায়ক এবং সার্ভেয়ার এমরান হোসেন ও উচ্চমান সহকারী হেদায়েত উল্যাহকে সদস্য করা হয়। তাদের তত্ত্বাবধানে ওই ডাকের আয়োজন করা হয়।

Advertisement

তবে ওই ডাকে অংশগ্রহণের দিন নিজেদের পছন্দের লোক ছাড়া কাউকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

এতে চেয়ারম্যানঘাটের খাস আদায়ের জন্য পাঁচজনের অংশগ্রহণ দেখানো হয়। এরা হলেন, হাতিয়া উপজেলার সূর্যমুখী এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে মো. ছালাউদ্দিন, একই উপজেলার নবীপুর এলাকার মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. রাজু ও হুমায়ুন কবির, সদর উপজেলার মাইজদী এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন এবং সোনাপুর এলাকার মধ্যম করিমপুর গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে বেলাল হোসেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দৈনিক দুই হাজার ৭০০ টাকা জমা দেওয়ার শর্তে সোনাপুরের বেলাল হোসেন ইজারা পান।

অন্যদিকে দক্ষিণ চর আলাউদ্দিন-চর পল্লবী থেকে সন্দ্বীপ উপজেলার হারিশপুর-কালাপানিয়া ফেরিঘাটে খাস ডাকের জন্য দুইজন প্রার্থীর অংশগ্রহণ দেখানো হয়। এরা হলেন, সূবর্ণচর উপজেলার চর আলাউদ্দিন গ্রামের মো. মোশাররফ হোসেনের ছেলে মো. মহিব উল্লাহ বাবুল ও সদর উপজেলার মোহব্বতপুর গ্রামের মৃত মো. সামছুদ্দোহার ছেলে মো. আবদুজ জাহের হারুন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দৈনিক চার হাজার ৫০০ টাকা জমা দেওয়ার শর্তে সদরের মো. আবদুজ জাহের হারুন ইজারা পেয়েছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ২৮ আগস্ট নিজেদের লোক ছাড়া কাউকে জেলা পরিষদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা একই ব্যক্তি কয়েকজনের নামে ইজারার ফরম জমা দিয়ে দুইঘাটে দুইজনের নামে নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ নিয়ে প্রভাবশালীরা ভাগ করে নিয়েছেন। উন্মুক্ত অংশগ্রহণ হলে খাস আদায়ে রাজস্বের পরিমাণ অনেক বেশি হতো। দখলের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের লোকজনও জড়িত। এখন স্বাধীন দেশে এমন ব্যবস্থা হলে সাধারণ জনগণ যাবে কোথায়?

Advertisement

সহকারী প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দুটি ফেরিঘাটেই উন্মুক্ত ডাকের আয়োজন করেছি। যারাই আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে কেউ অভিযোগ করলে ভেতর থেকে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা ডাক প্রক্রিয়া শেষ করে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে উপস্থাপন করেছি। তিনি সর্বোচ্চ দুই দরদাতাকে কার্যাদেশ দিতে সম্মতি দিয়েছেন। এখানে অনিয়মের কোনো বিষয় আমার জানা নেই।

ডাকে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগকারীরা কার্যক্রম শেষে আমাকে জানিয়েছেন। আগে জানলে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

দেওয়ান মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, এ ডাকের অনিয়মের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। জেলা পরিষদের আন্তঃজেলা ফেরিঘাটের খাস আদায়ের জন্য তিন সদস্যের কমিটি রয়েছে। তারা যাকে মূল্যায়ন করেছে আমি তাকে নির্বাচিত করেছি। কোনো অভিযোগ উঠলে মূল্যায়ন কমিটি জবাব দেবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/এএসএম