এক রিসোর্টে চলছিল ‘একটি খুনীর সন্ধানে মিতিন’ ছবির শুটিং। ঘটনাটি ঘটে সেখানেই। দৃশ্য বোঝাতে গিয়ে নায়িকাকে কাছে ডাকেন ছবির পরিচালক অরিন্দম শীল। রীতিমতো ঝাড়ি মেরে কোলে বসান। তারপর বকুনির জরিমানা হিসেবেই যেন তার গালে চুমু খান তিনি।
Advertisement
এটি ৩ এপ্রিলের ঘটনা। গত জুলাই মাসে শেষ হয় ছবির শুিটং। তখন এ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি অভিনেত্রী। কিন্তু কলকাতায় ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ ‘রাত দখল’-এ অরিন্দমকে দেখে তিনি আর সহ্য করতে পারেননি। যৌন হয়রানির ওই ঘটনা প্রকাশ করে দিয়েছেন ওই অভিনেত্রী।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনে অভিযোগ করেন ওই অভিনেত্রী। বিষ্ণুপর থানায় অভিযোগও করেছেন অরিন্দম শীলের নামে। ঘটনায় গত শুক্রবার নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে অরিন্দমকে। তিনি লিখিতভবে ক্ষমা চেয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ঘটনাটি অনিচ্ছায় ঘটে গেছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন অব উইমেনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘ওই অভিনেত্রী আমাদের বলেছেন, যেহেতু তাকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে, অরিন্দমকেও প্রকাশ্যেই ক্ষমা চাইতে হবে। নির্মাতা প্রথমে বলতে চেয়েছিলেন যে ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে গেছে। কিন্তু অভিনেত্রী প্রতিবাদ করে বলেছেন যে, পরিচালক তাকে চুমু পছন্দ হয়েছে কি না জানতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি আবারও চিঠিটা লিখতে রাজি হয়েছিলেন। আমরা তাকে সেই সুযোগ দিতে পারছি না।’
Advertisement
ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অরিন্দম শীল বলেন, ‘এখন এসব নিয়ে বলার মতো কিছু আর আমার মাথায় আসছে না। আমি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার। অনিচ্ছাকৃত ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার জন্য যদি সে খারাপ বোধ করে, তাতে আমি দুঃখিত। এসব ক্ষেত্রে কী করা উচিত সে বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চেয়েছি। বাকিটা সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তারা যা খুশি বলতে পারে, সে অধিকার তাদের আছে। আমার ধারণা তারা আসল ঘটনা জানেই না।’
‘একটি খুনীর সন্ধানে মিতিন’ ছবির অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা। ছবি: সংগৃহীত
ঘটনাটি আসলে কী ঘটেছিল? অভিনেত্রী বলেন, ‘তিনি আমাকে তার কোলে বসতে বলেছেন। আমি রাজি হইনি। তখন তিনি বকুনির সুরে বলেছেন, বসো বলছি। অমন বকা দেওয়ায় আমি না বসে পারিনি। তিনি আমার গালে একটা চুমু দেন, আমি তো অবাক! কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে সেখানে উপস্থিত সবাই হাসছিল। মনিটরের সামনে গিয়ে তিনি বললেন, তোমার পছন্দ হয়নি?
ওই অভিনেত্রী আরও বলেন, লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়ার পরও যদি তিনি গণমাধ্যমে বলেন যে, ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে গেছে, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা যদি এতদূর পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
Advertisement
এতকিছুর পরও কেন শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন? এ প্রসঙ্গে ওই অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রোডাকশন হাউস আমাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না এবং তারা আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফ্লোরে তাদের পক্ষ থেকে লোক দেবে। শুটিং চালিয়ে যাব কি না সে ব্যাপারে আমাকে তারা জানাতে বলেছিল। এ কারণে আমি শুটিংয়ে ফিরেছি। ঘটনাটি আমার জন্য ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক, তবু আমি শুটিংয়ে ফিরেছি, কারণ আমি একজন পেশাদার শিল্পী। আমি শুটিং বন্ধ করলে অনেকের ওপর এর প্রভাব পড়তো।’ তিনি বলেন, রাত দখল কার্যক্রম আমাকে এসব প্রকাশের সাহস যুগিয়েছে।
ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি সুব্রত সেন গণমাধ্যমকে বলেন, অরিন্দমকে সাসপেন্ড করা হলেও তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে পারবেন। তবে তিনি গিল্ডের কোনো কাজে অংশ নিতে পারবেন না। ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার নিয়ম হচ্ছে, যারা গিল্ডের সদস্য নন, এমন পরিচালকদের টেকনিশিয়ানরা সহযোগিতা করেন না।
আরএমডি/এএসএম