বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অর্থায়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলমান আশুগঞ্জ-আগরতলা চার লেন সড়ক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতীয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রকল্পে নিয়োজিত ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ দেশে চলে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে চার লেন মহাসড়কের কাজ। কবে নাগাদ কাজ পুনরায় শুরু হবে তা অজানা।
Advertisement
এদিকে, সড়কটিকে জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় দিন দিন তা হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কটি চার লেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বিলম্বিত হয় প্রকল্পের কাজ। প্রায় ৫১ কিলোমিটারের এ মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। যা বাস্তবায়ন হচ্ছে ভারতের ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে।
তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে করা প্রকল্পের প্রথমটি আশুগঞ্জ থেকে সরাইল, দ্বিতীয়টি সরাইল থেকে আখাউড়ার তন্তরবাজার এবং তৃতীয় প্যাকেজটি তন্তরবাজার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত। সবকটির কাজই দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে। এরমধ্যে তৃতীয় প্যাকেজের কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তিন দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুনে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভারতে চলে যান। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সেতু, বিরাসার থেকে পুনিয়াউট পর্যন্ত ফ্লাইওভার ও কালভার্ট নির্মাণ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে নির্মাণসামগ্রী ও দামি যন্ত্রাংশ। প্রতিদিন চুরি হচ্ছে সড়ক ও নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের মালামাল।
এদিকে, নির্মাণাধীন এই মহাসড়কের কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কিছু অংশ খানাখন্দে ভরে যাওয়ায় যানচলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। আশপাশের বাসা-বাড়িসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে অনেকটাই লাটে উঠেছে।
সড়কের পাশের পীরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ওয়াসিম বলেন, ‘ভাবছিলাম সড়কটি হলে আমাদের অনেক উন্নতি হবে। কিন্তু এর কাজই শেষ হওয়ার নাম নেই। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা। ধুলাবালির কারণে চলাচল করা কষ্টকর।’
পেশায় একজন ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সড়কটির কিছু স্থানে খানাখন্দের কারণে ট্রাক নিয়ে চলা ঝুঁকিপূর্ণ। বিরাসার, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় অনেক সময় ট্রাকের এক্সেল ভেঙে পড়ে থাকতে হয়। ২-৩ ঘণ্টার যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এখন শুনলাম ভারতীয়রা কাজ ফেলে চলে গেছে। তাহলে এর বাকি কাজ করবে কে?’
Advertisement
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, ভারতীয় শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় বাংলাদেশে এসে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে সেটিও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মতো জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা চলছে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/এমএস