৪৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় পদ্মা সেতুর উপর রেল সংযোগ প্রকল্প রয়েছে। চায়না সরকারের সহায়তা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ নামের একটি প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে। ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘের এ প্রকল্পটিতে চীন সরকার ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করবে। ১০ হাজার ২৩৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার। জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রেলমন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ।মঙ্গলবার শেরে বাংলানগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে এ প্রকল্পসহ ৮টি নতুন ও ১টি সংশোধিত প্রকল্পসহ মোট ৯ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ১৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এতে সরকারি অর্থায়ন ১৯ হাজার ২৬৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ১৫২ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বিফ্রিং করে এসব তথ্য জানান।পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজকের বৈঠকে ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, চীন সরকারের সহায়তায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি মাধ্যমে রেললাইনটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপল পর্যন্ত যাবে। ভবিষ্যতে রেললাইনটি ভারতের কলকাতা,কক্সবাজার এবং চীন- মিয়ানমার রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার রেলওয়ে করিডর গঠন করা হবে। যার ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে জানান তিনি। মুস্তফা কামাল বলেন, ঢাকা-যশোরের মধ্যে একটি রেল পথ থাকলেও বিদ্যমান লাইনটি ঘুরাপথে দৈর্ঘ্য বেশি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা -যশোর রুটের দৈর্ঘ্য কমিয়ে যাত্রা সময় হ্রাস করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া জিডিপি আনুমানিক এক শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ ৩৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি যেদিন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলবে সেদিনেই রেলও উদ্বোধন করা হবে।অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো: ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পযর্ন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪-লেনে উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মহাসড়ক এন-৭ এর মাগুরা শহর অংশের রামনগর মোড় হতে আবালপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ’ প্রকল্প। এতে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৮৯০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে ৫৩৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।‘প্রাণীরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। উদ্যোন তাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ এবং চর এলাকায় উদ্যোন ও মাঠ ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার’ প্রকল্প। এতে ব্যয় করা হবে ৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এতে ব্যয় করা হবে ১৮৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ বেতারের মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্রে ১০০০ কিলোওয়াট মাধ্যম তরঙ্গ ট্রান্স মিটার’ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।এমএ/জেএইচ/আরআইপি
Advertisement