আইন-আদালত

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে: চিফ প্রসিকিউটর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগের প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

Advertisement

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কাজে যোগ দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদও।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সম্ভাব্য প্রধান অপরাধী দেশ থেকে পালিয়েছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সেটা আমরা শুরু করবো। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অপরাধী প্রত্যার্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এ চুক্তিটি হয়েছিল। তিনি যেহেতু বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান আসামি হবেন মনে করি। অধিকাংশ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সুতরাং এ প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে তাকে আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করবো।

নিজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এভিডেন্স কালেক্ট করা। অপরাধটা গোটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সব জায়গায় একই সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় একটা কমন ইনস্ট্রাকশন ছিল গুলি করে সব মেরে ফেলা। এ অপরাধের যে আলামতগুলো সেগুলো সংগ্রহ করে কম্পাইল করা, এটা একটা চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আসামিরা এখনো পলাতক। প্রধান আসামি দেশত্যাগ করেছেন। অনেকে দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

Advertisement

গণহত্যার আলামতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে, যেহেতু ঘটনাগুলো তাজা, এ মামলায় যারা আসামি হবেন তারা এখনো বাংলাদেশে আছেন। অনেকে দায়িত্বেও আছেন। তারা এ আলামতগুলো ধংস করার চেষ্টা করবেন। তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব এ আলমতগুলো দ্রুত সংরক্ষণ করা, দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো সংগ্রহ করা। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার হাতে নিয়ে আসা। যেন এ আলামতগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।

আরও পড়ুন

কালিয়াকৈরে হাসিনা-কাদেরের নামে দুই হত্যা মামলা নীলফামারীতে হাসিনা-কাদেরসহ ৩০০ জনের নামে মামলা রিকশাচালককে হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনাসহ ৬৮ জনের নামে মামলা

তিনি সব ধরনের আলামত তদন্ত সংস্থা বা প্রসিকিউশনের কাছে পৌঁছানোর জন্য ছাত্র-জনতাসহ ভুক্তভোগীদের প্রতি আহ্বান জানান।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এটা এমন একটা বিচার হবে যে, বিচারের পর শহীদ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বাদীপক্ষসহ আসামিপক্ষও মনে করবে তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়েছে।

Advertisement

আসামিদের প্রতি জুলুম করা হবে না আবার ছাড়ও দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অপরাধগুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে তদন্তকালে আসামিদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন হবে। নিশ্চয়ই আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার চাইবো। আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে যরা সম্ভাব্য অপরাধী তারা যাতে আদালতের জুরিকডিকশনের বাইরে চলে যেতে না পারেন। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা থাকবে।

আইন সংশোধনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সরকারের সঙ্গে বসে এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবো।

গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অন্তত ১১টি পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়। বর্তমানে সেগুলো তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন

ভারতের জন্য ‘কূটনৈতিক মাথাব্যথা’ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ফেরত চাওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতে হাসিনার মুখ বন্ধ রাখতে হবে যে কোনো দেশ যে কাউকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ।

এতে প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আরও চারজন আইনজীবীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিয়োগ পাওয়া বাকি চার আইনজীবী হলেন, মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

এ ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অর্ধশতাধিকের বেশি মামলায় কয়েকশ আসামির বিচার ও ছয়জনের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে। তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছিল।

এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম