দেশজুড়ে

নদীভাঙনে ফেনীতে জনপদ বিলীনের আশঙ্কা

ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটার আগেই ফেনীর কালিদাস পাহালিয়া নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবাড়িসহ জনপদ বিলীনের আশঙ্কায় শতাধিক পরিবারে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের উত্তর নেয়ামতপুর গ্রামে বন্যার পানি নেমে গেলেও ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান। রাস্তাঘাট বেহাল। মনির উদ্দিন ভূঞা বাড়ির বাসিন্দারা বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া কাপড়-চোপড় শুকাতে ব্যস্ত। এরমধ্যেও সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। বাড়ির পাশ ঘেঁষা কালিদাস পাহালিয়া নদী। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙনরোধে নদীর পাড়ে ফেলা ব্লক ও জিও ব্যাগ পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। ফলে সেখানকার অন্তত ১২০ পরিবারে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মনির উদ্দীন ভূঞা বাড়ির বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন মালদ্বীপ থাকেন। কদিন আগে বন্যায় হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত ছিল ঘর। এখন হঠাৎ বাড়ির পাশে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি।

জাহাঙ্গীর আলম নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, কদিন আগেও ঘরে চার ফুট উচ্চতা পানি ছিল। এখন ঘরবাড়ি ভাঙলে আমরা কোথায় যাবো। ভাঙন ঠেকাতে দুই-একদিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা জরুরি।

Advertisement

কলেজছাত্র আহনাফ আতিক জানান, বর্তমানে বসতঘর থেকে সাত ফুট দূরত্বে নদী চলে এসেছে। এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শতাধিক ঘরবাড়ি ও মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উত্তর নেয়ামতপুর এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লেমুয়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে ছনুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ টংগীরপাড় এলাকার কালিদাস পাহালিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি হওয়া অন্তত ৫০ ঘর বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয় পেশকার বাড়ির রাকিব আফসার জানান, পার্শ্ববর্তী অন্তত ৫০টি ঘর বিলীন হয়ে যায় এবং শতাধিক ঘর এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।

Advertisement

স্থানীয় আইয়ুব কোম্পানির ছেলে আজিজুল হাকিম পিয়াস জানান, এমন কিছু মানুষের ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায় যা ছিল তাদের শেষ সম্বল।

আলী আজ্জম মোল্লা বাড়ির আরমান জানান, তাদের পেছনে অন্তত ১৫ ফুট বাড়ির জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায় এবং ক্রমশ ভাঙন ঘরের দিকে এগোচ্ছে। মঙ্গলবার ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অতিদ্রুত নদীভাঙন এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, নেয়ামতপুর, টঙ্গিরপাড় ও লেমুয়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে ভাঙনের দৃশ্য দেখেছি। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি চলছে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেডএইচ/জিকেএস