২০০৬ সালের কথা। আগে থেকে মনস্থির করেছিলেন অন্যের অধীনে চাকরি করবেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে পোলট্রি ব্যবসায় যাত্রা শুরু করেন জাহেদ হোসেন বাপ্পী। ছোট পরিসরে শুরু করে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বড় খামারি। একটি-দুটি খামার থেকে গড়ে তুলেন ২২টি ছোট-বড় খামার। এক দুই হাজার মুরগির বাচ্চা থেকে প্রায় ৮০ হাজার মুরগির বাচ্চা ছিল তার খামারে।
Advertisement
হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা তার সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। চোখের সামনে সব হারিয়ে এখন দিশেহারা তিনি। কিছু বুঝে উঠার আগে তার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না। সব কিছু নতুন করে শুরু করতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুমহীন রাত কাটছে। বলছিলাম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পোলট্রি ব্যবসায়ী জাহেদ হোসেন বাপ্পীর নিঃস্ব হওয়ার গল্প।
বন্যায় চোখের সামনে নিজের স্বপ্ন ভেসে গেলেও কিছু করার ছিল না তার। নির্বিকার চেয়ে থেকে চাপা কষ্ট নিয়ে দিন পার করছেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মিরসরাই ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত জাহেদ হোসেন বাপ্পির খামারে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার ক্ষতচিহৃ। খামারের ভেতর স্যাঁতসেঁতে পানি জমে রয়েছে। পড়ে রয়েছে খামারের সব সরঞ্জাম। নষ্ট হয়ে গেছে মোটর থেকে শুরু করে কর্মচারীরা থাকার সম্বলও। কয়েকজন শ্রমিক খামার পরিষ্কার করছেন।
Advertisement
ভয়াবহ বন্যায় এই উপজেলায় পোলট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক খামারি। টাকার অঙ্কে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এদের মধ্যে অন্যতম বাপ্পি। তার ২২টি শেডের মধ্যে ৯টি শেডে বিক্রয়যোগ্য প্রায় ৬০ হাজার মুরগি বন্যার পানিতে মারা গেছে। পাশাপাশি শেড নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকগুলো শেড ভাড়া নেওয়ায় পড়েছে বিপাকে। মুরগির শেডে শ্রমিক, বিদুৎসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাসে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা বেতন পরিশোধ করতে হয়। বারইয়ারহাট পৌর বাজারের ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন মোরশেদ বলেন, বাপ্পী প্রায় ১৮ বছর ধরে পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন সফল খামারি। কিন্তু এবারের ভয়াবহ বন্যা তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
জাহেদ হোসেন বাপ্পী বলেন, আমি ২০০৬ সাল থেকে পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার মিসরাইয়ের বেচুনি পোল এলাকা, ছাগলনাইয়ার আলোকদিয়া, সমিতি বাজার এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার মুরগি ছিল। বিক্রয়যোগ্য এসব মুরগি বন্যার পানিতে মারা গেছে। এতে আমার প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সিপি কোম্পানির অনুমোদিত ডিলার। ওরা আমার কাছে ১০ লাখ টাকা পাবে। এছাড়া ব্যাংক ঋণ রয়েছে। এখন কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবো ভাবতে পারছি না।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, বন্যায় মিরসরাইয়ে পোলট্রি সেক্টরে বড় ক্ষতি হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত জাহেদ হোসেন বাপ্পী।
Advertisement
এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/জিকেএস