এর আগেও দু’বার বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। এবারও নির্বাচিত হলেন। প্রতিবারই নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের ফুটবলকে কোথায় দেখতে চান, সেটা জানিয়ে আসছিলেন। তবে গত দু’বারের সময়ে প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার মিল যে ঠিক রাখতে পারেননি সেটা বোঝাই যায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের পারফরম্যান্স দেখলে।এবারও বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কথা বললেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আগামী চার বছরে আপনি কোথায় দেখতে চান বাংলাদেশের ফুটবলকে?এ প্রশ্নের জবাবে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি যেটা দেখতে চাই আর যা হবে তার মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এবার শেখ জামাল ক্লাব এএফসি কাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে। আমি দেখতে চাই বাংলাদেশ যেন টপ এশিয়া কাপ খেলতে পারে। দ্বিতীয়ত সাংগঠনিক দারুণ একটা ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই। কারণ যিনি আমার পর আগামীতে আসবেন তাকে যেন বেশি কষ্ট করতে না হয়। আমাদের কর্মসূচিটা অনুসরণ করলেই তিনি উন্নয়ন করতে পারবেন।’আগেই জানিয়েছিলেন, এবারই হচ্ছে সালাউদ্দিনের শেষ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন। এই চার বছরে তিনি যে কাজগুলো গুছিয়ে এনেছেন সেগুলো সমাপ্ত করতে চান। তিনি বলেন, ‘অনেক কিছুই গুছিয়ে এনেছি। আগামী দিনগুলোতে এ কাজগুলো শেষ করতে চাই।’নিজের কমিটি সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেন, ‘এখানে যাদের দেখছেন তারা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজার, ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল প্লেয়ার। এ সেক্টরে কাজ করার আমাদের চেয়ে আগ্রহ কারো বেশি নেই, অভিজ্ঞতাও কারো বেশি নেই। আমাদের আগ্রহই ফুটবল। ফুটবল আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমাদের সঙ্গে যে লোকগুলো বিজয়ী হয়েছেন তাদের এক একজনের ২০-২২ বছরের অভিজ্ঞতা। আপনারা রেজাল্ট দেখবেন। আমরা এখানে এসেছি কাজ করতে। কারণ আমরা ফুটবলকে ভালোবসি। আমি দেশের ফুটবলকে অনেক উপরে নিতে চাই। যেখানে একটা প্লেয়ারের বেতন ৪ কোটি টাকা সপ্তাহে হতে পারে ওই খেলাটাকে উপরে নেওয়া কষ্ট আছে। আবার আমি বিশ্বাস করি, সবাই যেহেতু আমাদের সমর্থন করছে তাই যদি আমরা কাজ করি তাহলে এই যে মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এমন অনেক খবর দিতে পারবো।’প্রতি জেলায় একাডেমি নির্মান প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘এটা একটা উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট। আমি যদি শুরু করি এবং সবগুলো জেলায় করতে না পারি, আমি যদি ২০ টা পারি ৩০ টা পারি তা কম কিসের। শুরু তো হলো। পুরোটা পারলে তো আলহামদুলিল্লাহ। শুরু তো করি। তার পর যিনি আসবেন তিনি করবেন।’জাতীয় দল ও নতুন বিদেশি কোচ প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘শেষ কয়েকটি মাস ফুটবলের নির্বাচন নিয়ে যে নাটক হয়েছে তাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম না ভোটাররা আমাকে আনবে কি আনবে না। আমি যদি না আসতে পারি এবং কোচ এবং অন্যান্য বিষয়ে আগেভাগে কাজ করাটা বিফলে যাবে। কোচ নিয়ে আমার কিছু প্লান আছে যা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবো। দুই দিন আগে আমি সভাপতি ছিলাম না। তাই কোনো কোচের সঙ্গে আলোচনা করিনি। আজ সভাপতি, আলোচনা শুরু করবো।’জেলা ফুটবল প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ডিস্ট্রিক ইজ স্পেশাল। তাই বলে এমন স্পেশাল নয় যে ক্লাবগুলোকে ফেলে দেবো। জেলা এবং ক্লাবগুলোর মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে। তা নাহলে ফুটবলের উন্নয়ন হবে না। আমি যদি কেবল জেলা নিয়েই থাকি তাহলে সেখান থেকে ভালো খেলোয়াড় বের হলে কোথায় যাবে যদি ঢাকায় খেলা না থাকে। তাই আমাকে দুটি নিয়েই কাজ করতে হবে। ৪৭ টি জেলায় লিগ সম্পন্ন হয়েছে। যারা করতে পারেনি হয় তাদের মাঠের সমস্যা ছিল, না হয় সাংগঠনিক সমস্যা ছিল। তবে করবে। একদিনই যে সব হয়ে যাবে তাতো না।’আগামী চার বছরে নিজের কাজের অগ্রাধিকার নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম তার পুরোটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। তবে যদি অগ্রাধিকারের কথা বলেন আমি উল্লেখ করবো তিনিট বিষয়। জেলা, ক্লাব ও জাতীয় দল। এটা আমার ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার। তবে দেশের গোটা ফুটবলের উন্নয়ন করতে হলে ইশতেহারের যা দেওয়া হয়েছে তা কাভার করতে হবে। স্কুল টুর্নামেন্ট, একাডেমি সবগুলোই কাভার করবো। তবে ফুটবলের প্রকৃত সাফল্য আসবে ক্লাব ডেভেলপমেন্টস, জেলা ডেভেলপমেন্টস ও জাতীয় দল। এগুলোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন-যখন ৮ বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন খেলা হতো না। এটাতো সত্য কথা। এখন খেলা হয় না বলতে পারবেন না। বলতে পারবেন সাম্প্রতিক জাতীয় দলের পারফরম্যান্সটা ভালো না। কিন্তু খেলাতো সব জায়গাই হচ্ছে। এ ধারাবাহিতকা ধরে রাখলে ফুটবল এমনিতেই উঠে আসবে। আমরা একটা স্টেজে চলে এসেছি। এখন ফাইনাল স্টেজে। এ চারবছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন। এমনিক বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যও।’বাফুফেতে নিজের ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করবেন সালাউদ্দিন। এ লক্ষ্যে স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো তিনি নিজেই গঠন করবেন বলে জানালেন বাফুফে সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার আমি কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান মনোনীত করে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম পুরো কমিটি তৈরী করতে। এবার আমি পুরো কমিটিই তৈরী করবো। কারণ, এবার আমি পুরো দায়দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো। যদি কোনো কমিটি ব্যর্থ হয় তাহলে নতুন কমিটি করা হবে। সবাইকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। আয়েশ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি এমনভাবে কাজ করতে চাই যাতে কোনো মানুষ যেন আন্দাজে কথা-বার্তা না বলতে পারে।’তৃতীয়বার বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই কিশোরী ফুটবলাররা সাফল্য বয়ে আনলেন তাজিকিস্তান থেকে। সেই নারী ফুটবলে সাফল্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফুটবল তো ২০৯ দেশ খেলে। চারটা-পাঁচটা দেশ খেলে না যে এটা খুবই সোজা কাজ। আমরা কাজ আরম্ভ করেছি অনেক আগের থেকেই। চেষ্টা করছি ডেভেলপমেন্টের। তবে সময় নেবে। আজকেই আপনারা জেনেছেন আমাদের মেয়েরা অনুর্ধ্ব-১৪ দল সেন্ট্রাল এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। এরকম অনুর্ধ্ব-১৬ ছেলেরাও হয়েছে। আমরা যে কাজগুলো শুরু করেছি তার রেজাল্ট আপনারা দেখতে পাবেন। দুই চারজন যদি না জেনে টিভিতে টক-শো করে ফুটবল ফেডারশনকে ব্যর্থ নাজিল করে তা দুর্ভাগ্যজনক। আপনারা অপেক্ষা করেন। তবে মেয়েদের ফুটবলটা এখনো বিশ্বে ওই লেভেলে যায়নি, যে লেভেলে পুরুষ ফুটবল আছে। তাই যদি আমরা যদি মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করি তাহলে সাফল্য পাওয়াটা পুরুষ ফুটবলের চেয়ে সহজ হবে।’আইএইচএস/বিএ
Advertisement