বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১৮ দফা দাবিতে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন করছেন ওষুধ উৎপাদনে জড়িত শ্রমিকরা। প্রায় দুই সপ্তাহের এ আন্দোলনে স্কয়ার, জেনারেল ফার্মা, ইনসেপ্টার দুটি কারখানাসহ ১৯টি ফার্মাসিউটিক্যালসে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি বন্ধ হওয়ার পথে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর তেঁজগাওয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছে ওষুধ শিল্প সমিতি। কারাখানায় নিরাপত্তা চেয়ে করা এই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থা পরিচালক ও সমিতির সভাপতি আবদুল মুক্তাদির।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মুক্তাদির বলেন, বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি রপ্তানিকারক হাত হতে পারে এমন অবস্থায় চলে এসেছে ওষুধ শিল্প। গত ৫০ বছরে দু-একটি ঘটনা ছাড়া এখানে কাজ করা শ্রমিকদের চাহিদা নিয়ে অসন্তোষ ছিল না। তাদের খাওয়া-দাওয়া, বেতন-ভাতাদিসহ সব কিছুর ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেতন। কখনোই তাদের অসন্তোষ দেখা যায়নি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানাচ্ছেন। যা পূরণ করা আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। কারণ বিগত চার বছরে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে মাঝারি ধরনের কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বড় যে ২৫ থেকে ৩০টি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি রয়েছে তাদের লাভের পরিমাণও একেবারে সীমিত, কখনো হচ্ছেও না।
তিনি বলেন, আমরা ভাবতে পারছিনা যে কর্মীরা এমন আন্দোলন করতে পারে। স্টাফদের বন্দি করে রেখে তারা কাগজে সই নিতে চাচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত একটি কোম্পানির স্টাফদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। ইনসেপ্টায়ও প্রায় ৪০০ স্টাফকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। দাবি-দাওয়া জানাতে পারে তাই বলে এভাবে জিম্মি করেতো হতে পারে না। বিজ্ঞানী ও ঊর্ধ্বতনদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এভাবে জিম্মি করে রাখবে এবং আমরা সহযোগিতা পাবো না, এটা আমাদের উদ্বেগের ও হতাশাজনক।
Advertisement
ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি বলেন, অনেক কারখানা ভাঙচুর করা হয়েছে, অনেকে সমন্বয় করতে পারছে না। এরই মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টার দুটি কারখানা, জেনারেল ফার্মাসহ ১৯টি ওষুধ তৈরির কারখানা বন্ধ রয়েছে। যেগুলো চলছে কখনো বন্ধ থাকছে, কখনো চালু থাকছে। সহিংসতা হোক এটা আমরা চাই না। ওষুধ শিল্প সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরো দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং তা অপূরণীয়। কোনো ধরনের সহিংসতা, জিম্মি দাবি আদায়ের ভাষা হতে পারে। সরকারের মাধ্যমে একটা আলোচনা হতে পারে। আমরা নিরাপত্তা চাই।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের একটা দাবি পূরণ করলে নতুন করে আরও দাবি তোলা হচ্ছে। একটার পর একটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনোভাবেই আমরা এটাকে থামাতে পারছি না। এ কারণে আমাদের সন্দেহ হয় এতদিন কোনো দাবি না জানালেও হঠাৎ করে কেন এমন? আবার পূরণ করলেও কেন মানছে না আমাদের বোধগম্য নয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়কে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনটি আগে করবে সেটি নিয়ে ভাবছেন। ওষুধ শিল্পকে আমরা অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আমরা চাই তারা এখনই এগিয়ে আসুন।
মোক্তাদির বলেন, এভাবে চললে মজুত থাকা ওষুধ দিয়ে কিছুদিন হয়তো চলবে কিন্তু এরপরই সংকট তৈরি হবে। এর পেছনে কারা আছে আমরা সেটিও জানি না। এটা আমাদের কাজএ না। কিন্তু ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটা বুঝতে পারছি। তাই সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
এএএম/এমআইএইচএস
Advertisement