অর্থনীতি

সব রেকর্ড ছাড়িয়ে খেলাপি ঋণ এখন ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

Advertisement

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত আসছে না। অন্যদিকে সরকার পতনের পর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘরানার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পালিয়েছেন। এতে আগামীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ স্থিতি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ খেলাপি। তিন মাস আগে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা যা ছিল মোট বিতরণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।

আরও পড়ুন চ্যালেঞ্জ ঋণ পরিশোধ, পাশে থাকার আশ্বাস দাতাদের পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশে বিএফআইইউয়ের চিঠি পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকের সংকট নিয়ে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৫ বছরে ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে লোপাট ৯২২৬১ কোটি টাকা: সিপিডি ৭ ব্যাংক থেকে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচার করেছে বেক্সিমকো

সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসে বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।

Advertisement

এদিকে যেসব ঋণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, সেসব গ্রাহকদের বড় অংশের বিরুদ্ধে আছে অর্থপাচারের অভিযোগ। প্রভাবশালীদের সেসব অবৈধ সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

পাশাপাশি সংস্থাটি পাচারকারীদের স্থানীয় সম্পদ জব্দের জোর চেষ্টা করছে। দেশের অর্থ আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ ও পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করছে সরকার।

বিএফআইইউয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক খাতের বিতর্কিত এস আলম, সামিট, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, ওরিয়ন, নাসাসহ অনেক গ্রুপের তথ্য চেয়ে একাধিক দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে। প্রভাবশালীদের হাতে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কী পরিমাণ অর্থ বের করে পাচার হয়েছে সেটি যাচাইয়েরও কাজ চলছে।

সংস্থাটির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আলোচিত গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকদের অর্থপাচারের আংশিক তথ্য বিএফআইইউয়ের কাছে রয়েছে। এখন আরও বিস্তারিত তথ্য নেওয়ার কাজ চলছে। বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে। পাচার অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হলেও দেশের সব সংস্থা মিলে জোর চেষ্টা করছে। আশা করছি সুফল বয়ে আনবে।

Advertisement

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণমাধ্যমে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে ঋণের নামে কত টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেছেন, তার হিসাব করা হচ্ছে।

আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছে। পৃথিবীতে কেউ এভাবে ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না, আমার জানা নেই। তার নামে-বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। এ মুহূর্তে কেউ যেন এস আলম গ্রুপের সম্পদ না কেনেন।

ইএআর/এমএইচআর/এএসএম