জাতীয়

‘আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম, লাশটা যেন পরিবার পায়’

‘গুম অবস্থায় বারবার মনে হতো তারা হয়তো আমাকে ক্রসফায়ার করে হত্যা করবে। আমি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম। আল্লাহ আমার লাশটা যেন কুকুরের খাদ্যে পরিণত না হয়। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়’- এভাবেই আয়নাঘরের বন্দিদশার কথা বলছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বন্দিশালা থেকে মুক্তির ঘটনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আযমী বলেন, ‘যখন আমার বাসায় তারা আসলো তখন আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কারা, পরিচয় কী, পরিচয়পত্র দেখান। আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো ওয়ারেন্ট আছে কি না। তারা আমার কথার জবাব দেননি। আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে আমাকে নিয়ে গাড়িতে চোখ বেঁধে দেয়। এরপর একটা জায়গায় নিয়ে গেলো। সেখানেই ফেলে রাখা হয়, অন্ধকার এক ঘরে। সেখানে দিন না রাত এসব কিছুই বোঝা যেত না। টয়লেট যেতে চাইলে চোখ হাত বেঁধে নিয়ে যেত।’

আরও পড়ুন> ‘আয়নাঘর’ থেকে যেভাবে মুক্তি পেলেন আযমী আরমানকে ‘আয়নাঘর’ থেকে ছাড়াতে টিউলিপের সাহায্য চেয়েছিল পরিবার

তিনি বলেন, ‘আমি গেল আট বছর সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় পৃথিবীর কোনো আলো দেখিনি, আকাশ দেখিনি, সূর্য দেখিনি। প্রতিরাতেই ক্রসফায়ারের ভয় থাকতো। তারা খুব দুর্ব্যবহার করতো আমার সঙ্গে। রাতের পর রাত কেঁদে কেঁদে সময় কেটেছে। মাঝে মাঝে তারা চোখ এমনভাবে বাঁধতো, মনে হচ্ছিল আমার চোখের মনি ফেটে যাবে। হাতকড়া পরা থাকতে থাকতে হাতে ঘা হয়ে যেত। আট বছর আমি এক অন্ধকার ঘরে ছিলাম, পৃথিবীর কিছুই আমি দেখতে পাইনি এ সময়।’

Advertisement

আযমী বলেন, ‘আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছে। আমাকে আদেশ করতো। আমার চোখ বেঁধে রাখতো। আমি দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যারা আমাকে পৃথিবীর আলো দেখতে দেয় না তুমি তাদের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে নাও।’

এর আগে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিনগত রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে তুলে নেওয়া হয়। সেসময় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করা হয়। অবশেষে সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট বন্দিশালা থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবারের কাছে ফেরেন আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

এনএস/এসআইটি/এএসএম

Advertisement