দেশজুড়ে

লাঠি হাতে চাকরি দাবি, ষড়যন্ত্র বলছেন শ্রমিক নেতারা

ঢাকা ইপিজেডে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের শতকরা হার ৫১% ও ৪৯% শ্রমিক আন্দোলনে যে আচরণ দেখা যায় এবার তা ভিন্ন। সবাই খুবই মারমুখী ভিন্ন গ্রুপের ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন

৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা। সাভারের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) পুরোনো জোনের প্রধান ফটকের সামনে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের জটলা। এগিয়ে যেতেই শোনা যায় চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা। মোবাইল বের করতেই বাধা আসে। মোবাইল পকেটে রাখার নির্দেশ আশে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে। সঙ্গে উচ্চারিত হয় তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি। পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা নিরাপদ স্থানে যাওয়া।

Advertisement

দূর থেকে দেখা যায়, কেউ কেউ ডিইপিজেডের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কঠোর অবস্থানে নিরাপত্তাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

আন্দোলকারী একজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন। ততক্ষণে আন্দোলনকারীরা নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে দু-তিনজন ওই স্থান ত্যাগ করেন। যাদের বয়স অনুমান ১৪ থেকে ১৭।

আরও পড়ুন- নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, নিষ্ক্রিয় পুলিশ

সেখানেই কথা হয় একজনের সঙ্গে। নাম-পরিচয় জানতেই কিছু সময় নীরব থেকে বলেন, আলমাস।

Advertisement

দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরুষ মানুষের চাকরি নেই পোশাক কারখানাগুলোতে। নারীদের শুধু চাকরি হয়। আজ তারা চাকরির জন্য আন্দোলন করছেন।

‘পুরুষ মানুষের চাকরি নেই পোশাক কারখানাগুলোতে। নারীদের শুধু চাকরি হয়। আজ তারা চাকরির জন্য আন্দোলন করছেন’

চাকরি নিতে হলে সিভি কিংবা বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এসব এনেছেন কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কাগজপত্র বাসায় আছে। লাগলে এনে দেওয়া যাবে। পরে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সটকে পড়েন।

প্রশ্ন জাগে আসলেই কি ন্যায্য দাবি আদায়ে নেমেছেন তারা, নাকি অন্য কোনো কিছু? উত্তর খুঁজতে জাগো নিউজ কথা বলে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের দাবি, অন্য সময় শ্রমিক আন্দোলনে যে আচরণ দেখা যায়, এবার একটু ভিন্ন। সবাই খুবই মারমুখী।

Advertisement

খবর পাওয়া যায় জামগড়া, জিরাবোসহ আশপাশের পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। নাশকতার আতংকে ছুটি ঘোষণা করা হয় শিল্পাঞ্চলের অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানা। এ সময় আন্দোলনকারীদের লাঠিসোঁটা বহন করারও খবর পাওয়া যায়৷

আরও পড়ুন- আশুলিয়ায় পোশকশ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

কেন এমন আন্দোলন আর কারা করছেন এমন পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা। তা জানতে কথা হয় শ্রমিক নেতা অরবিন্দ ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা শ্রমিক না। তাদের আচার-আচরণে মনে হচ্ছে তারা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা।

তিনি আরও বলেন, চাকরি নিতে এলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। তারা কোনো নিয়মের ধার ধারছে না। কথায় কথায় চালাচ্ছে বিক্ষোভ, কোথাও কোথাও করছে ভাঙচুর। যাতে পুরো শিল্পাঞ্চলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

‘যারা আন্দোলন করছে তারা শ্রমিক না। তাদের আচার-আচরণে মনে হচ্ছে তারা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা’

আরেক শ্রমিক নেতা খায়রুল মামুন মিন্টুর বক্তব্যও প্রায় একই। তিনিও মনে করেন, একটি গোষ্ঠী পোশাক খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কোথাও কোথাও ঝুট ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষও জড়িত। তিনি খাতটিকে বাঁচাতে এখনই কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে।

আসলেই কি ডিইপিজেডে নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য আছে? তা জানতে বেপজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সূত্র জানায়, ঢাকা ইপিজেডে মোট ৭৯ হাজার ৫৮৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। যার মধ্যে নারী শ্রমিক ৪০ হাজার ৮১৮ জন ও পুরুষ শ্রমিক ৩৮ হাজার ৭৭০ জন। যার শতকরা হারে নারী ৫১ শতাংশ ও পুরুষ ৪৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন- সাভারে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে। তিনি জানান, বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী কথিত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বেপজার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সহনশীলতা ও সহানুভূতির সঙ্গে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে কিছু গ্রুপের সঙ্গে যখন কথা বলা হচ্ছে পেছনেই আরেকটা গ্রুপ আগেই মানি না বলে স্লোগান দিচ্ছে। একেক গ্রুপ একেক সময় একেক বক্তব্য উপস্থাপন করছে। শুধু তাই নয়, চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভকারীদের অনেকের কাছেই সিভি চাইলে দেখা যাচ্ছে তারা সিভি না দিয়ে পেছনে চলে যাচ্ছে।

‘ঝুট ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষও জড়িত রয়েছে। পোশাক খাতটি বাঁচাতে এখনই কঠোর হতে হবে সরকারকে’

বর্তমানে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন দেশে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে তখনই চাকরিপ্রত্যাশীদের এই আন্দোলন ইপিজেডের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ব্যাহত করছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম বলেন, চাকরির দাবিতে বিক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।

এফএ/জেআইএম