স্বাস্থ্য

ঢামেকের বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ, জরুরি বিভাগে রোগীর ভিড়

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) জরুরি সেবা চালু হয়েছে। তবে হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগ ও রুটিন সেবা চালু হয়নি। এতে জরুরি বিভাগে বেড়েছে রোগীর চাপ।

Advertisement

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢামেকে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢামেকের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে তালা ঝুলছে। কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ রয়েছে ১০-১২ জন রোগী ও স্বজনরা, যারা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে এসেছেন। তাদের অনেকেই চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও আন্দোলনের খবর জানতেন না।

বহির্বিভাগ থেকে সেবা না পেয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কাউকে আবার হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়।

ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২ হাজার ৬০০ আসনের এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার রোগী সেবা নিতে আসেন।

Advertisement

হাজারীবাগের বাসিন্দা জব্বার আলী তার মেয়ে শাহিদাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তবে চিকিৎসা নিতে না পেরে হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছেন তিনি। জব্বার বলেন, মেয়ের চর্মরোগের জটিলতা আছে। দুদিন ধরে ঢামেকে আসছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু দুদিনই কোনো ডাক্তার পাইনি। এখানকার একজন নার্স জানান, চিকিৎসকরা আন্দোলন করছেন বলে বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ। অন্য কোনো দিন সেবা নিতে আসতে হবে।

আরও পড়ুন> ১০ ঘণ্টা পর ঢামেকের জরুরি সেবা চালু বিএসএমএমইউতে সকাল থেকেই রোগীদের উপচেপড়া ভিড় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ, চালু আছে জরুরি বিভাগ

রোকেয়া বেগম নামে আরেকজন জানান, তার চর্মরোগজনিত জটিলতা আছে। ঢামেকে এসে ডাক্তার দেখাতে না পেরে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের আন্দোলনের খবর জানতাম না। জানলে টাকা খরচ করে হাসপাতালে আসতাম না। এখন কি করবো। হাসপাতালে যখন এসেছি, ডাক্তার দেখিয়েই যাব। এরপর তিনি জরুরি বিভাগের দিকে চলে যান।

বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ থাকায় রোকেয়া বেগমের মতো অনেকেই জরুরি বিভাগে এসে ডাক্তার দেখাচ্ছেন। রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালে রুটিনসেবা বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগ থেকেও অনেক রোগী ফিরে যেতে দেখা যায়। তেমনই একজন হ্যাপি আক্তার। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। তার পিত্তথলির অস্ত্রোপচার হয়েছিল ঢামেকে এক সপ্তাহ আগে। সেই অস্ত্রোপচারের সেলাই কাটতে তিনি আজ ঢামেকে এসেছেন। কিন্তু একবার বহির্বিভাগ, আরেকবার জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ফেরত যেতে হয়।

Advertisement

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তিনবার বহির্বিভাগে, দুবার জরুরি বিভাগে সেবা নিতে গিয়ে পারিনি। জরুরি বিভাগ থেকে বলা হলো, পরে আসেন। সেলাই কাটার বিষয়টি পরে করলেও চলবে বলে চিকিৎসকরা জানান।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জাগো নিউজকে বলেন, অন্য হাসপাতাল থেকে যারা রেফার্ড হয়ে আসছে তাদের ভর্তি নিচ্ছি। আর এখানেও খারাপ অবস্থায় যারা আসছে তাদের ভর্তি নিচ্ছি। তবে খুব জরুরি না হলে তাদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আাসাদুজ্জামান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের জরুরি বিভাগের সেবা চালু হয়েছে গতকাল রাত থেকেই। চিকিৎসকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আজকের মধ্যে বাকি সেবা চালু হওয়ার আশা করছেন তিনি।

ঢামেকের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফ হোসেন বলেন, বহির্বিভাগের রোগীর সেবা জরুরি বিভাগে দেওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিনের মতো আজ জরুরি বিভাগে রোগীরা আসছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।

এর আগে শনিবার (৩১ আগস্ট) দিনগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে একাধিক চিকিৎসক আহত হন। এরপর ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের উপস্থিতিতে চালু করা হয় জরুরি বিভাগের সেবা কার্যক্রম।

এএএম/এসআইটি/এএসএম