স্বাস্থ্য

কাজে ফিরলেন চিকিৎসকরা, রোগী ও স্বজনদের স্বস্তি

কর্মস্থলে নিজেদের নিরাপত্তাসহ চার দফা দাবিতে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করার পর কাজে ফিরেছেন চিকিৎসকরা। এতে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেড়েছে। তারা আগের মতো যথারীতি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় রোগী এবং তাদের স্বজনদের মধ্যে স্বস্তিও ফিরেছে।

Advertisement

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর শ্যামলী ও আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, টিবি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

বেলা ১১টায় চক্ষু হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ এবং ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। টিকিট কাউন্টারেও ছিল দীর্ঘ লাইন।

আরও পড়ুন ৪ দফা দাবিতে সারাদেশে চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঢামেকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগী ও স্বজনরা ঢামেকে হামলা, চিকিৎসকদের মারধর

শফিউদ্দিন নামের একজন বলেন, বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা সবাই এসেছেন। রোগী দেখছেন। তবে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখাতে অনেক সময় লাগছে। এখানে এসেছি সকাল সাড়ে ৯টায়। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে সাড়ে ১১টায় চিকিৎসক দেখাতে পেরেছি। রোগীর অনেক চাপ। তারপরও ডাক্তাররা কাজে ফেরায় এবং চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি অনুভব করছি।

Advertisement

হাসপাতাল প্রাঙ্গণের বাইরে কথা হয় নিলুফা রানী নামের একজনের সঙ্গে। স্বামীর চিকিৎসার জন্য তিনি এসেছেন শরীয়তপুর থেকে। রোগীর এই স্বজন বলেন, আমার স্বামী স্ট্রোক করে চোখের আলো হারিয়েছেন। এখন কিছুদিন পর পর চোখে সুই দিতে হয়। প্রত্যেক মাসেই এই হাসপাতালে আসা হয়। আমার ছেলে তার বাবাকে ডাক্তার দেখাচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বাইরে অপেক্ষা করছি।

রোগীর ভিড় দেখা গেছে শ্যামলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালেও। তবে এই হাসপাতালে রোগীর চাপ তুলনামূলক কিছুটা কম থাকায় অল্প সময়েই টিকিট সংগ্রহ করে চিকিৎসক দেখাতে পারছেন অনেকে।

জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা উপস্থিত আছেন৷ রোগীরা সকাল থেকে যথারীতি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

গত শনিবার (৩১ আগস্ট) দিনগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে একাধিক চিকিৎসক আহত হন। এসময় রোগী ও তাদের স্বজনদেরও এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

Advertisement

হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে রোববার সকাল থেকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। এরপর গতকাল রোববার চিকিৎসকরা সারাদেশে সব ধরনের চিকিৎসা কেন্দ্রে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন।

তবে রোববার (১ সেপ্টম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস পেয়ে সন্ধ্যার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন দোষীদের গ্রেফতারে দুদিন সময় চাইলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ১০ ঘণ্টা পর ঢামেকের জরুরি সেবা চালু নিরাপত্তার শর্তে জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়ার ঘোষণা চিকিৎসকদের

এর আগে হামলাকারীদের গ্রেফতার-বিচার, নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে রোববার সকাল থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (কর্মবিরতি) পালন করেন দেশের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। পরে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে কর্মবিরতি স্থগিত করে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কাজে ফেরেন তারা।

জানা গেছে, শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ‘চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু’র অভিযোগে চিকিৎসকদের মারধর করা হয়। মৃত শিক্ষার্থীর নাম আহসানুল ইসলাম (২৫)। আহসানুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। মারধরের ঘটনায় শনিবার বিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এসএম/এমকেআর/জিকেএস