চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পর মৎস্য খামার এবং ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। সরকারি হিসাবে, শুধু মৎস্য ও কৃষি খাতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অন্যদিকে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ৯২ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ টাকা। সরকারি হিসাবের সঙ্গে মাঠের চিত্রে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও স্পষ্ট হয়েছে।
উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ও মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী আদর্শ গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পানি জমে থাকার কারণে জমির পর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম, ঢ্যাঁড়স, করলা, ঝিঙে ও বরবটির গাছ পচে গেছে। মরে গেছে রোপা আমনের বীজতলার চারা। নষ্ট হয়ে গেছে টমেটোর জন্য তৈরি করা খেত। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের গাছ ও লতাপাতা সরিয়ে নিচ্ছেন। মাঠ আবার প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এবারে বৃষ্টির পাশাপাশি সাগরের পানির উচ্চতাও ছয় ফুটের মতো বেড়ে যায়। জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় বাঁশবাড়িয়া ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় এবং ফসলের মাঠে লবণাক্ত পানি ঢুকে। সৈয়দপুর এলাকায় ঢলের জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচার জন্য রিং বাঁধ কেটে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে সেখানেও কৃষিজমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে। এসব এলাকার কৃষকরা পরবর্তী সময়ে ভালো ফসল পাবেন কি না, এমন আশঙ্কায় রয়েছেন।
Advertisement
টেরিয়াইল এলাকার কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি তার ৮০ শতক জমিতে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ঢ্যাঁড়স ও গ্রীষ্মকালীন শিম লাগিয়েছিলেন। পাহাড়ি ঢলে জমে থাকা পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
পাহাড়ি ঢলে পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮২০ কৃষি পরিবার। মোট রোপা আউশ ৫ হাজার ৩০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫০ হেক্টর, শরৎকালীন সবজি মোট ৩০৫ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫০ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ২৩৪ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০ হেক্টর এবং রোপা আমন ৩০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হেক্টর। টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৯২ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ টাকা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড ও পৌর সদরের আংশিক এলাকার কৃষিজমি পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। যদি সরকারি সহযোগিতা আসে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
Advertisement
এদিকে টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ডুবে মাছ চাষের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, সীতাকুণ্ডে মোট পুকুর রয়েছে ৬ হাজার ২০৪টি। এরমধ্যে ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০০টি। সব মিলিয়ে ২৩৪ হেক্টর পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উপজেলার উত্তর অংশে পুকুরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে একটা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। এরপর প্রতিবেদন তৈরি করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। যদি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কোনো সহযোগিতা আসে, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/জিকেএস