ফেনীতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। পানিবাহিত নানা রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসার আশায় ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা।
Advertisement
তবে হাসপাতালে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণের বেশি রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। আশংকাজনক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী শয্যার অভাবে বারান্দা, গাছতলা ও রাস্তায় বসে সেবা নিচ্ছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৫ জন। এখানে শূন্য থেকে ৩০ বছরের রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। অপর একটি ভবনে তদূর্ধ্ব রোগীরা সেবা নিচ্ছেন, সেখানেও ২১ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ৮০ জন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরের রাস্তায় ও বাগানে বিছানা পেতে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন অভিভাবকরা। একই চিত্র শিশু ওয়ার্ডেও। শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ১৪০ জন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ রোগী ভিড় করছে। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল সহকারীরা।
Advertisement
ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া এলাকা থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ফাতেমা আক্তার। ভেতরে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে মাদুর পেতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
তিনি জানান, হাসপাতালে এসেও খোলা আকাশের নিচে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমার মতো এমন অসংখ্য মানুষ জায়গা না পেয়ে রাস্তায় ও বাগানে গাছতলায় বসে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
শফিকুর রহমান নামে রোগীর আরেক অভিভাবক বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ওয়ার্ডের ভেতরে যতজন রোগী তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বাইরে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাত্র ৩-৪ জন নার্স রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও অনেকে সেবা পাচ্ছে না। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে তারাও হিমশিম খাচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব এখানে নার্স ও চিকিৎসক বাড়ানোর অনুরোধ করছি।
ছেলেকে নিয়ে ভর্তি আবুল কালাম বলেন, হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসাতো দূরে থাক, দাঁড়ানোর পরিস্থিতিও নেই। এত রোগী আমি আগে কখনো দেখিনি। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের সামনের বাগানে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছি। এভাবে চিকিৎসা সেবা হয় না। এ সংকট সমাধানে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
Advertisement
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ শ্যামলী রানী বলেন, শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে রোগী আছে ১৩৬ জন। যে পরিমাণ রোগী সে অনুসারে নার্স নেই। বিপুলসংখ্যক রেগীর চাপ সামলাতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সবিতা রায় বলেন, শুধুমাত্র শনিবারই ৯৫ জন রোগী ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। যাদের অধিকাংশ শিশু। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫০ জন ভর্তি হয়েছেন। ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ১৭টি কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ১৭৫ জন। জনবল কম থাকায় আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না, আমরাও ভোগান্তিতে আছি।
সিনিয়র স্টাফ মো. আরিফুর রহমান বলেন, বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ বেশি। হাসপাতালে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ রোগীর চিকিৎসা স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক-নার্স দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব না। এরপরও কর্তৃপক্ষ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষ যদি আইসিডিডিআরবির সহযোগিতা নিতে পারে ও এখানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা যায় তাহলে রোগীরা আরও বেশি চিকিৎসা সেবা পাবে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সাম্মী বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যাকালীন দূষিত পানি ও রোগবাহী আবহাওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে আমরা ২১ শয্যার আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করেছি।
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের বিষয়টি অবহিত করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। এরইমধ্যে কয়েকটি এনজিও আমাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসার আশা প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের বলেছি দুর্যোগ পরবর্তী এ সময় ফিল্ড হাসপাতাল (তাঁবুর তৈরি অস্থায়ী হাসপাতাল) করা গেলে রোগীরদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারবো।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এফএ/জিকেএস