গণপরিষদ আহ্বান করে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের মতামত ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মানা হবে বলেও জানান তিনি।
Advertisement
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসনের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন নাহিদ ইসলাম। বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিংটন প্রবকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
ক্লিংটন পবক বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদের কাছে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘এটা জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে, নাকি নির্বাচিত সরকারের কাছে একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে দেওয়া হবে।’
জবাবে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু আমরা দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই, তাই সংবিধান সংশোধন আবশ্যক। আমরা চাই জনগণের কথাই সংবিধানে উঠে আসুক। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে গণপরিষদ আহ্বান করে আমরা সংবিধান সংশোধন করবো।’
Advertisement
আলোচনা শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানানোয় অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটি ছাত্র-জনতার সরকার। এ সরকারের মূল লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করা। এজন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যুবসমাজ তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহী এবং পারদর্শী। এ খাতে যুবসমাজকে অধিকতর দক্ষ করে গড়ে তুলতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যও অস্ট্রেলিয়াকে অনুরোধ করবো।’
ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিংটন পবক তাদের দুটি প্রকল্প- এআই বেইজড সলিউশন এবং সাবমেরিন ক্যাবলে অস্ট্রেলিয়া সরকারের নতুন সংস্করণ, যার নাম ক্যাবল কানেক্টিভিটি অ্যান্ড রেজেলিয়্যান্স সেন্টারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ দুটো প্রকল্প নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এআই বেইজড সলিউশন অনেকটা গুগল ট্রান্সলেটের মতো। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী চাকমা, মারমারা তাদের মাতৃভাষায় কথা বললে তা লিখিতভাবে স্ক্রিনে ভেসে উঠবে।’
Advertisement
দুটি প্রকল্পের পুরো প্রক্রিয়া ও বিষয়টি অবগত হয়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টর গড়ে তুলতে চাই, যা দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যা চালানো হয়েছে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিকভাবে বিচার করতে চাই আমরা। বিশ্ববাসী জানুক, বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কী নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা কামনা করছি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে বেশি দুর্নীতি একই দিনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। তারা যৌথভাবে আইসিটি, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়েও কথা বলেন। উভয় দেশ সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিতর্কিত ধারাগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সেগুলো সংশোধন করা হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে যে ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল, তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি, আন্দোলনের সময় যে গণহত্যা তারা চালিয়েছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কের বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’
হাইকমিশনার ডিজিটাল বাংলাদেশের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে। আমাদের ডাটাবেজ ও ইনফরমেশন আপ টু ডেট রাখার মাধ্যমে সেই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছি।’
সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের প্রতিনিধি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ডা. মো. মুশফিকুর রহমান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।
এএএইচ/কেএসআর