জাতীয়

চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

আওয়ামী লীগের শাসনামলে টানা ৬ দফায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে নাগরিকরা।

Advertisement

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে এই আল্টিমেটাম ঘোষণা হয়।

বিক্ষুব্ধ জনতার অভিযোগ, মানি ম্যানেজ কৌশলে চট্টগ্রাম ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ পদটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছেন প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। নিজের বেতন নিজে বাড়িয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন দেশের বিপুল অর্থ। ওয়াসার প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এসব অপরাধের কারণে তাকে এমডি পদ থেকে পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নিজ উদ্যোগে পদত্যাগ না করলে হেনস্তার শিকার হবে বলে এমডিকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

Advertisement

এর আগে শনিবার সকাল দশটার পর থেকে কয়েকশ বিক্ষোভকারী ওয়াসা ভবনের সামনে জড়ো হন। তারা এ সময় ‘দফা এক, দাবি এক; এমডির পদত্যাগ’ স্লোগান দেন। একই সঙ্গে এমডির পদত্যাগের পাশাপাশি ১৭ দফা দাবিও উত্থাপন করেন সংগঠনটির নেতারা।

দাবিসমূহ হলো-

১। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এমডি ফজলুল্লাহর আয়কর বিবরণী ও সম্পদ বিবরণী জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

২। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফজলুল্লাহর ভ্রমণ বিলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ভ্রমণ বিলকে ব্যবসায় পরিণত করায় অনতিবিলম্বে তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

৩। অবিলম্বে স্বৈরাচার সরকারের পোষ্যদের নিয়ে গঠিত বোর্ড বাতিল করতে হবে।

Advertisement

৪। চট্টগ্রাম ওয়াসার মূল দুর্নীতির কারখানা প্রকৌশল ও রাজস্ব শাখাকে ঢেলে সাজাতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

৫। ৪ আগস্ট স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে তাণ্ডবে অংশ নেওয়া ওয়াসার কর্মচারীদের চিহ্নিত করে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে।

৬। স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর ফজলুল্লাহর সমস্ত অবৈধ অফিস আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

৭। এমডি ফজলুল্লাহর সময়ে বহিষ্কৃত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।

৮। যেসব কর্মকর্তা প্রাধিকারের বাইরে গাড়ি ও জ্বালানি ভোগ করেছে তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

৯। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঁচ বছরের বেশি একই কর্মস্থলে কর্মরত তাদের দ্রুত বদলি করতে হবে।

১০। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের নথি, অডিট সংক্রান্ত তথ্য এবং সমস্ত হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

১১। চট্টগ্রাম ওয়াসার রেস্ট হাউজের বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ও গ্যাসের বিল ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নিজখাত থেকে পরিশোধ করতে হবে।

১২। ব্যারিস্টার কলেজ এলাকায় অবৈধ সংযোগের তদন্ত ও ওয়াটার ওয়াচে ভাউচারে পানি বিক্রয়ে টাকা আত্মসাৎ তদন্ত প্রতিবেদনসহ ২০০৯ এর পর সংগঠিত অন্যান্য দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

১৩। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্প, রাজস্ব ও রাজস্ব শাখার দুর্নীতি প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মনিটরিং সেল চালু করতে হবে।

১৪। বিক্রয় বিভাগে ১৫ বছর ধরে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রিচার্ড নেলসন পিনারুর অনিয়ম তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

১৫। উইংস লি. নামের ঠিকাদার থেকে স্মার্ট মিটার কিনে ‘পদ্মা’ নামে বিল করার রহস্য ও অনিয়ম তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

১৬। গত ১০ বছর ধরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পানির সিস্টেম লস দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাতের সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

১৭। গত ১৫ বছরে করোনাসহ নানা সংকটের মধ্যে পানির দাম বাড়িয়ে মানুষের যে কষ্ট; সেটার প্রতিকার করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে অবসর নেন। চাকরি জীবনে অনিয়মে জড়িয়ে হয়েছিলেন বহিষ্কার। পরবর্তীতে একটি কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হয়ে জড়ান অর্থ আত্মসাতে। দুই দফায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে খাঁটিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ তৈরি হলে প্রথম দফায় তিন মাসের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান তিনি। পরে পাঁচ দফায় পুনর্নিয়োগে গত ১৩ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করেছেন এ কে এম ফজলুল্লাহ। সর্বশেষ ২০২০ সালের অক্টোবরে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার পর হাসান আলী নামে এক গ্রাহক পুনঃনিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেছিলেন।

এএজেড/এমআরএম/জেআইএম