জীবনমুখি গান গেয়ে দুই বাংলায় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। অন্যায়, অবিচার, সামাজিক বৈষম্য নিয়ে গানগুলোর কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর। এমনকি গানে রাজনৈতিক প্রবণতাকে কটাক্ষ করায় বেশ কবার কারাবরণ করতে হয়েছিল শিল্পীকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেরই মনে হয়েছিল, এই শিল্পী যেন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছেন। মনে করতেন নচিকেতা কি ফুরিয়ে গেলেন? কিন্তু কলকাতায় সদ্য ঘটে যাওয়া অঘটন মনে করিয়ে দিয়েছে, নচিকেতা ফুরোবার নন। নচিকেতার আজ ৬০তম জন্মদিন। ফুলেরও ঘ্রাণ ছড়ানোর সময়সীমা থাকে। নচিকেতা কম দেননি। সেই ক্যাসেটের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত তার গানের সংখ্যা ও জনপ্রিয়তা অতিক্রমযোগ্য নয়। যদি সেটা সম্ভব হয়, তবে এতটুকু নিশ্চিত করা যায়, মানুষের ভালোবাসার যে রেকর্ড তিনি গড়েছেন, সেটা শুধু তারই।
Advertisement
নচিকেতার বাপ-দাদার বাড়ি বাংলাদেশের পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচরীরামপুর গ্রামে রয়েছে তার মামার বাড়ি। দেশ ভাগের সময় তার পরিবার কলাকতায় চলে যায়। শৈশবে গান লেখা শুরু করেছিলেন নচিকেতা চক্রবর্তী, পাশাপাশি নিজের মতো করে গাওয়া। নব্বই দশকের প্রথম ভাগে ‘এই বেশ ভালো আছি’ অ্যালবাম প্রকাশের পর থেকে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন নচিকেতা।
নচিকেতা চক্রবর্তী গাওয়া বহু জনপ্রিয় গান এখনও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে রেখেছে। বিশেষ করে ‘বৃদ্ধাশ্রম’, ‘নীলাঞ্জনা’, ‘ও ডাক্তার’, ‘সরকারি কর্মচারী’ সেই তালিকায় শুরুর দিকে থাকবে। এ ছাড়া ‘এই বেশ ভালো আছি’, ‘কে যায়’, ‘কি হবে’, ‘চল যাব তাকে নিয়ে’, ‘একলা চলতে হয়’, ‘কুয়াশা যখন’, ‘আমি পারি’, ‘দলছুট’, ‘দায়ভার’, ‘এই আগুনে হাত রাখো’, ‘আমার কথা আমার গান’, ‘তীর্যক’, ‘এবার নীলাঞ্জনা’, ‘হাওয়া বাদল’, ‘সব কথা বলতে নেই’, ‘দৃষ্টিকোণ’, ‘আয় ডেকে যায়’সহ অনেক একক অ্যালবামের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। বেশ কয়েকটি যৌথ অ্যালবাম ও প্লেব্যাকও করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
Advertisement
নিন্দুকেরা বলে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনা নচিকেতা চুপ ছিলেন। যেখানে ভারতের অনেক শিল্পী সরব হয়েছিলেন। তবে ভারতের কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় নচিকেতা অন্য শিল্পীদের সঙ্গে প্রতিবাদ করেছিলেন। ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের লেখা ‘মা তুমি এসো না’ শিরোনামে একটি কবিতা পড়েন নচিকেতা। সেটি ছড়িয়ে পড়তেই উপহাসের শিকার হন তিনি। হয়তো মানুষ তার কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করেছিল! মানুষ হয়তো তাকে পাশে চেয়েছিল, পথে চেয়েছিল! সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় যেমনটি তিনি করেছিলেন। কিন্তু বয়স এখন ষাট। এখন যৌবন যার, পথে তো সেই নামবে, চেতনায় নিয়ে নচিকেতার দ্রোহ।
এমএমএফ/আরএমডি/এমএস