শামিম হোসেন শিশিরের বারান্দা বা ছাদের মনোমুগ্ধকর বাগান যেন মহাখালীর ব্যস্ত নগরজীবনে সবুজের ছোঁয়া। ছোট্ট এই বাগানকে শুধু শখের বাগান হিসেবে নয় বরং তার শৈশবের নওগাঁর সবুজ গ্রামাঞ্চলের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
Advertisement
শিশির বলেন, ‘আমি প্রকৃতি ভালোবাসি। নওগাঁ জেলার গ্রামাঞ্চলে আমার জন্ম। সেখানেই সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে বড় হয়েছি। সেই সূত্রেই প্রকৃতির সঙ্গে ভালোবাসা জন্মেছে কি না জানি না। তবে গাছপালা, পশু-পাখি আমার ভীষণ পছন্দ সেই ছোটবেলা থেকে।
তার বাগানের ওষুধি গাছগুলোর মধ্যে তুলসি এবং পাথরকুচি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘গাছগুলো শুধু সজীবতার প্রতীক নয়, এগুলো বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পাথরকুচির পাতা শ্বাসকষ্ট এবং ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আরাম দেয়। তুলসি গাছের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ আছে। শুধু সৌন্দর্য নয়, সুস্থতা আর স্বাস্থ্যের জন্যও গাছ লাগানো জরুরি।’
শিশিরের বাগানে রয়েছে রঙ্গন ও কামিনী ফুলের গাছ। যেগুলো তার বাগানের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফুল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রঙ্গনের লাল ফুলগুলো বাগানকে জীবন্ত করে তোলে। কামিনীর সাদা ফুলের মনোরম ঘ্রাণ পুরো বারান্দায় ছড়িয়ে পড়ে।’ এভাবেই তিনি ফুল গাছগুলোর প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
Advertisement
এ ছাড়া তার বাগানে রয়েছে চাইনিজ বট, একটি শক্তিশালী বনজ গাছ। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘গাছগুলো শুধু বারান্দার সৌন্দর্য বাড়ায় না বরং ছোটখাটো বনভূমির আবেশও এনে দেয়।’
আরও পড়ুন
মরিচ চাষের সঠিক সময় কখন? জয়পুরহাটে থোকায় থোকায় ঝুলছে আরবের খেজুরসবজির ক্ষেত্রে ধুন্দল, করলা এবং মরিচের গাছগুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শিশির জানান, গ্রামে থাকতে বসতবাড়িতে এগুলো করতেন। ঢাকায় এসে, বিশেষ করে এই বাসায় উঠে যখন বাড়িওয়ালা আপত্তি তুললেন না; তখন সেই সুযোগটা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাছের বিষয়টি আমি নির্দিষ্ট করে ভাবি না। যেখানে গাছ পাই, নিয়ে এসে টবে লাগিয়ে দিই। ফুল বা ফল কোনটা তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। সবুজ হলেই হয়।’
তবে তার বাগান শুধু সবজি, ফুল বা বনজ গাছের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, ‘এখানে আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পাখি পুষেছি। ছাদে নিয়মিত খাবার ছিটিয়ে দিই বলে বাবুই, কাক, শালিকের মতো কিছু পাখি নিয়মিতই ছাদে আসে।’
Advertisement
বাগানে আসে কিছু বিড়াল, যারা তার ভালোবাসার অংশ। শিশির বলেন, ‘বিড়াল সেভাবে পোষা হয় না, তবে নিয়মিত খাবার দিই বলে কিছু বিড়াল নিয়মিতই রুমে এবং ছাদে আসে।’
শামিম হোসেন শিশিরের বারান্দার বাগান শুধু শখের অংশ নয় বরং জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির অন্তরঙ্গ সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, ‘আমার আসলে এমন হয়, কখনো আগাছা জাতীয় গাছ বড় হতে থাকলে সেটাও কাটতে কষ্ট হয় এবং কাটা হয় না। মনে হয়, গাছ তো, কাটবো কেন!’ এভাবেই গাছের প্রতি তার ভালোবাসা ও মনস্তত্ত্বের দিকটি তুলে ধরেন।
সব মিলিয়ে শিশিরের বারান্দার বাগান যেন শহুরে জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সজীবতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বাগান তার হৃদয়ের আবেগ, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং জীবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।
এসইউ/এমএস