নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
Advertisement
শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত উপজেলার বাবু টকিজ হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর টহল দেখে উভয়পক্ষ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
আহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির সদস্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবু (৪৫), সদরের কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী লেবু মিয়া (৪২), যুবদলের সদস্য ও ইসমাইল এলাকার সাদেকুল ইসলামের ছেলে রিশাদ (২২), বিএনপি কর্মী নূরনবী (৪২), লেবু মিয়া (৫৫), হাবিবুল্লাহ (৩৫), জুয়েল (১৮), সৈয়দ আলী (৩২), জুয়েল (৪৪)।
স্থানীয় ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান উপজেলা বিএনপির কমিটি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা পাটোয়ারীর মধ্যে কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ চলছিল। এতে তারা দু’পক্ষই কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে আসছেন। ১ সেপ্টেম্বর রোববার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল আয়োজনের জন্য বিএনপি নেতা মাসুদ রানা পাটোয়ারীসহ নেতারা কিশোরগঞ্জ হাইস্কুলে স্থান নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে একই স্থানে মূল বিএনপিও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের স্থান নির্ধারণ করে।
Advertisement
উভয়পক্ষ একই স্থান নির্ধারণ করাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরমধ্যে মাসুদ রানা পাটোয়ারী বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক একেএম তাজুল ইসলাম ডালিমকে ফোনে হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার দিকে বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বাজারের দিকে আসার সময় মাসুদ রানা পাটোয়ারী গ্রুপের নেতাকর্মীরা তার ছোটভাই সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবুর দোকানের সামনে তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। পরে বর্তমান কমিটির সভাপতির কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিসোঁটা ও ইট পাটকেল নিয়ে উপজেলা শহরের মূল সড়কে দু’পক্ষই মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দু’পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে। এতে মাসুদ রানার ছোটভাই জাতীয় পার্টির সদস্য ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবুসহ বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সদর ইউপি চেয়ারম্যানের দোকান ভাঙচুর করেন। এ সময় শহরের দোকানপাট বন্ধ ছিল। এ সংঘর্ষের পর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পাটোয়ারী জাগো নিউজকে জানান, তারা নিজেরা পক্ষপাতিত্ব করে একটা কমিটি গঠন করেছে। আমারা যারা বেবির পক্ষে রাস্তায় নেমেছিলাম তাদের বাদ দিয়েছে। এখন যেহেতু আমাদের সামনে নির্বাচন, যেহেতু এ কমিটি কখনো আন্দোলন করতে পারে নাই এটা আওয়ামী লীগের মনগড়া কমিটি। সভাপতি মামুন এসেছে জাতীয় পার্টি থেকে ও ডালিম সাধারণ সম্পাদক হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে এসে। যারা প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মী তারা সবাই বাদ পড়েছি। আমরা এমতাবস্থায় যাদের পদ নেই ইউনিয়ন ভিত্তিক তাদের সুসংগঠিত করছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যোগসাজসে তারা এসে আক্রমণ করে চেয়ারম্যানের দোকান ভাঙচুর করে চেয়ারম্যানকে আহত করেছে। ছাত্র আন্দোলনে গ্রেনেড বাবুর ছেলে প্রধান, সেজন্য আওয়ামী লীগ এ সুযোগটা নিলো। বর্তমান কমিটির সভাপতি সম্পাদক আওয়ামী লীগ যুবলীগের হয়ে কাজ করে তারা ভাঙচুর করেছে।
Advertisement
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে সকালে মাসুদ রানা কল দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আমি সন্ধ্যার পর বাজারে আসলে তার ছোট ভাই গ্রেনেড বাবু আমাকে আটকানোর চেষ্টা করে। পরে আমি সেখান থেকে চলে এসে আমার নেতাকর্মীদের বিষয়টি জানাই। তারা সেটি শুনে রাস্তায় দাঁড়ায়। পরে মাসুদ রানার নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হওয়ায় পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করলে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যৌথবাহিনীর টহল দেখে উভয় পক্ষ স্থান ত্যাগ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
ইব্রাহিম সুজন/এফএ/এমএস