দেশজুড়ে

বন্যায় ভেসে গেছে ফখরুলের স্বপ্ন

একজন প্রকৌশলী হয়েও চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন ফখরুল ইসলাম মাসুক। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০০৯ সালে একটি পোলট্রি খামার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। নিজের মেধা-যোগ্যতায় পর্যায়ক্রমে ব্যবসা বড় হয়। আশপাশ এলাকায় ১৫টি মুরগির খামার ও একটি মাছের প্রকল্প গড়ে তোলেন। ফখরুল একাই এলাকার শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

Advertisement

কিন্তু সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে ফখরুলের স্বপ্ন। তার সবকটি খামার ও মাছের প্রকল্প পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে যায় সব মুরগি-মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় খামার। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তার।

ফখরুলের বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বাঘাইয়া গ্রামে। ধারদেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলেন ব্যবসা। অত্মপ্রত্যয়ী ফখরুলের দুই চোখে এখন শুধুই হতাশা।

জাগো নিউজকে ফখরুল জানান, বন্যায় তার খামারের ৪০ হাজার সোনালি মুরগি, ১০ হাজার লেয়ার মুরগি মারা যায়। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সবগুলো খামার। দুই গুদামে থাকা ১৫ লাখ টাকার মুরগির খাদ্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

শুধু ফখরুল নন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনীর দুই হাজারের বেশি খামারি। শেষ সম্বল হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। ঋণের দায়ে পথে বসতে হবে অনেককে।

ফেনী সদর উপজেলার আরেক খামারি মিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও দুটি খামারে ৩০ হাজার লেয়ার মুরগি বাঁচাতে পারিনি। আমরা এখন দিশেহারা। হতাশায় চোখ-মুখে কিছু দেখছি না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলায় ২৩ লাখ ৪ হাজার ৪১০টি হাঁস-মুরগির মারা গেছে। ভেসে গেছে ৬৪ হাজার ১৬১টি গবাদিপশু। সব মিলিয়ে এ খাতে ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকার প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। তিন হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার নষ্ট হয়েছে। তিন কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, তিন কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, বন্যায় ফেনীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।

Advertisement

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, বন্যায় ২৮৫ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হয়েছে।

আরএইচ/এএসএম