ফিচার

ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘আসনা’ কেন?

ভারত ও পাকিস্তান উপকূলে ধেয়ে আসছে বিরল একটি ঘূর্ণিঝড়। আরব সাগরের উত্তরে গুজরাট উপকূলে শুক্রবারই আছড়ে পড়তে পারে সেটি। ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আসনা’। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)।

Advertisement

এরই মধ্যে ভারতের গুজরাটে একটি ঘূর্ণিঝড় (আসনা) তৈরি হয়েছে। এটি উত্তরপশ্চিম দিকে গিয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে কিছুটা মিলিত হতে পারে। এছাড়া পশ্চিম-মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে। এটিও ধীরে ধীরে স্থলভাগে উঠে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। দুইয়ের প্রভাবে ৩ বা ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়তে পারে।

এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘আসনা’। এ নামটি পাকিস্তানের দেওয়া। এর অর্থ সর্বোচ্চ, উজ্জ্বলতম এবং প্রশংসনীয়। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণও বেশ আকর্ষণীয়। তবে এর নামকরণ নিয়েও চলছে নানান তর্ক বিতর্ক। জানেন কি ঝড়ের নাম কারা দেয়, কীভাবে ঝড়ের নামকরণ করা হয়? ঝড়ের নামকরণের আগে দেখা হয় তা যেন আপত্তিকর ও বিতর্কিত না হয়। উচ্চারণ করা সহজ এবং মনে রাখা সহজ হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

Advertisement

দেশের ইতিহাসে যত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে

প্রথমে ঝড়ের নামকরণের কোনো নিয়ম ছিল না। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এর জন্য একটি আদর্শ পদ্ধতি তৈরি করেন। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়, যাতে মানুষ ঝড়ের কথা মনে রাখতে ও শনাক্ত করতে পারেন। একটি নাম দিয়ে সচেতনতা তৈরি ও সতর্কতা প্রেরণ করা যেন সহজ হয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা যেমন-বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও), এশিয়ার জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়।

ভারতের আইএমডি ছয়টি আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে একটি যা ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। এই আবহাওয়া কেন্দ্রগুলো কেবল ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়, তবে নামগুলো এমনভাবে নেওয়া হয় যাতে কারও অনুভূতিতে আঘাত না হয় এবং এই নামগুলোর পুনরাবৃত্তি হয় না।

২০০৪ সালে, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ঝড়ের নামকরণের জন্য একটি সূত্রে ঐকমত্য পৌঁছেছিল। এই অঞ্চলে যে ৮টি দেশ পড়ে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। ভারত এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলো ২০০০ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের অনুশীলন শুরু করে।

ভারত ছাড়াও এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। এই দেশগুলো ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা সামনে রেখেছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্র সংঘের ওয়ার্ল্ড মেট্রোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন কিছু নিয়ম তৈরি করেছে।

Advertisement

আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের অনুশীলন ১৯৫৩ সালে শুরু হয়েছিল। একই সময়ে, এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তা ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা।

এছাড়া ২০১৯ সালে ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন যুক্ত হয়। যখন একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন এই ১৩টি দেশ তাদের ক্রম অনুসারে নাম নির্ধারণ করে। সোমালিয়ায় যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, তার নামকরণ করেছিল ভারত, যার নাম ছিল গতি। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের ঘুর্ণিঝড় বিপর্যয়ের নামকরণ করেছে বাংলাদেশ। এবার ২০২৪-এর শুরুতে ‘রিমালের’ নামকরণ করেছে ওমান। বর্তমানে যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে তার নামকরণ করেছে পাকিস্তান। আরও পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সংকেতের কোনটির অর্থ কী? ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘রিমাল’ কেন?

কেএসকে/এমএস