দেশজুড়ে

অনেকের ঘরে এখনো জ্বলছে না চুলা

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা। এখনো উপজেলার অনেক নিম্ন এলাকা থেকে পানি নামেনি। এতে এখনো অনেক পরিবারের ঘরে চুলা জ্বলছে না। বাইরে থেকে রান্না করা খাবার সংগ্রহ করে খেতে হচ্ছে তাদের।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকের বসতঘর পুরোটাই যেন ধ্বংসস্তূপ। বানভাসি পরিবারগুলো সব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। খাবারের পাশাপাশি পুনর্বাসনের চিন্তায় তাদের চোখে ঘুম নেই।

উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পরাগলপুর গ্রামের বৃদ্ধা শিউলী দাস। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সাজানো-গোছানো ঘরটার কিছুই যে অক্ষত রইলো না। খাট, পালঙ্ক, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, দলিল-দস্তাবেজ সব বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।’

দুর্গাপুর এলাকার মানিক লাল বলেন, ‘জীবনে এমন বন্যা দেখিনি। এ বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। থাকার ঘর, পুকুরের মাছ, জমির ধান কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।’

Advertisement

কাটাছরা এলাকার গৃহবধূ নারিগস সুলতানা বলেন, ‘প্রায় ১০ দিন চুলা জ্বলছে না। রান্নাঘরে পানি। প্রথম পাঁচদিনতো ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। দুদিন আগে বাড়ি এসেছি। কিন্তু এখনো চুলায় আগুন দিতে পারিনি।’

সব হারানোর এমন গল্প একটা দুটো নয় শত শত। ঘর, আসবাব, কাপড়চোপড় থেকে ব্যবসার পুঁজি—সব হারিয়ে দিশেহারা মানুষগুলো। বানের পানি যতই কমছে মানুষের বেঁচে থাকার সহায়-সম্বলগুলোর ক্ষত চিহ্ন যেন ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।

এদিকে বন্যা-পরবর্তী স্থানীয়দের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন। পানিবন্দি ছিলেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। মাইলের পর মাইল রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। হাঁটার পরিস্থিতি নেই অনেক রাস্তায়। কৃষি, মৎস্য, পোলট্রিসহ সার্বিক ক্ষতি হয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ।

Advertisement

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, পানি কমে যাওয়ায় প্রায় সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে উঠেছেন। তবে অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে, স্যাঁতসেঁতের কারণে ঘরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলায় বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়ে তার সমীক্ষার জন্য ৯ জন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তালিকা করা হলে আমরা সে অনুযায়ী পুনর্বাসনের কাজ শুরু করবো।

এম মাঈন উদ্দিন/এসআর/এএসএম