জাতীয়

১১ বছর আগে গুম হওয়া স্বামীর অপেক্ষায় মিনু আক্তার

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর। হঠাৎই বাসা থেকে কাওসার হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থ স্ত্রী মিনু আক্তার তখন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি এখন স্বজন হারানোদের একজন, যারা জানেন না আসলে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কী ঘটেছে। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। আজ ১১ বছর পরও অপেক্ষার পালা শেষ হয়নি মিনু আক্তারের।

Advertisement

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে মিনু আক্তার এসেছিলেন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হয়েছেন এমন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘মায়ের ডাক’ সংগঠন। এই সংগঠনটির আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে উপস্থিত হন মিনু আক্তার।

স্বৈরাচার সরকারের বিদায়ের পর অনেকেই গুম হওয়ার পর ফিরে এসেছেন। তার আশা, হয়তো তিনিও ফিরে পাবেন তার স্বামীকে।

আরও পড়ুন আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস আজ  ১৭ বছরে গুম হয়েছে ৬২৯ জন  গুম বন্ধে জাতিসংঘের সনদে বাংলাদেশের স্বাক্ষর 

কথা হয় মিনু আক্তারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, তার স্বামীর গুম হওয়ার গল্প এবং মেয়েকে নিয়ে তার নিদারুণ কষ্টের কথা।

Advertisement

মিনু বলেন, আমার স্বামী ছিলেন তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। পাশাপাশি একটি ভাড়া গাড়ি চালাতেন। ২০০৮ সালের মার্চে বিয়ের পর থাকতাম পশ্চিম নাখালপাড়ার একটি ভাড়া বাসায়। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে র‌্যাব পরিচয়ে ওই বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় আমার স্বামীকে। সেদিন আমি বাসায় ছিলাম না। আমার স্বামীর সঙ্গে সেই রাতে আরও তিনজন ছিলেন, কিন্তু কাওসারকে নিয়ে গেলেও তার বন্ধুদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, কোথায় আছে সে? আদৌ ফিরবে কি-না আমরা কিছুই জানি না। তবে আমরা বিশ্বাস করি একদিন ঠিকই ফিরে আসবে সে। নিখোঁজের পর থেকে হন্যে হয়ে তাকে আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। র‌্যাব, থানা, ডিবি অফিস, সবার দ্বারস্থ হয়েছি, কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি কাওসারের।

ওই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মিনু আক্তার বলেন, রাত তখন ২টা। বাসার দারোয়ানকে বলা হয় গেট খোলার জন্য। পরিচয় জানতে চাইলে বলা হয় আমরা প্রশাসনের লোক। গেট না খুলে দিলে তারা টপকে পার হয়। আমার স্বামীকে নিয়ে যেতে চাইলে যখন সে অস্বীকৃতি জানায় তখন তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাসার অনেকে আটকের কারণ জিজ্ঞেস করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানায়, এমনিতেই নেওয়া হচ্ছে। কাল সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাকে আর ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীকে যখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার মিমের বয়স মাত্র তিন বছর। আমার মেয়েটা তার বাবাকে ভালোমতো দেখেওনি। সারাদিন গাড়ি চালানো আর রাজনীতির কারণে সে অনেক রাতে বাসায় আসতো। তখন লামিয়া ঘুমে থাকতো, আবার যখন সে সকালে বের হতো তখনও মেয়েটা ঘুমেই থাকতো। আমার মেয়ে বলে, আম্মু আমি কি আব্বুকে দেখলে চিনতে পারবো? সে রাস্তায় কোনো পাগল দেখলে মনে করে এটাই বুঝি তার বাবা। আমার কাছে এসে কান্না করে।

Advertisement

স্বামীর খোঁজ চেয়ে মিনু আক্তার বলেন, আমার স্বামী যখন গুম হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। একটা মানুষ কোথায় হারিয়ে গেল কেউ জানে না। আমি এই গুমের বিচার চাই। নতুন সরকারের কাছে আমার স্বামীর মতো যারা গুমের শিকার হয়েছে তাদের সন্ধান দাবি করি। তারা যেন সবাইকে খুঁজে বের করে দেন। এই পরিবারগুলোর অনিশ্চয়তা যেন কেটে যায়। আর কোনো লামিয়াকে যেন বাবার অপেক্ষায় থাকতে না হয়।

এমএইচএ/এসএনআর/জিকেএস