মো. আবদুল কাদের জিলানী চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার খিলমোহর গ্রামের ছেলে। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। তার স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাবেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষমেশ সাফল্যের দেখা পান। ২০২৩ সালের এপ্রিলে জার্মানির ফ্রেডরিখ শিলার ইউনিভার্সিটি ইয়েনাতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে স্কলারশিপ পান। বর্তমানে পড়ছেন এমএসসি ইন ফটোনিক্স প্রোগ্রামে।
Advertisement
তার পথচলার গল্প নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—মো. আবদুল কাদের জিলানী: মধবিত্ত পরিবারেই আমার বেড়ে ওঠা। বাবা-মা সব সময় চেষ্টা করতেন সেরা স্কুল-কলেজ ও ভালো পরিবেশ দিতে। তাদের সেই চেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে শুরু করি। শৈশবে গ্রামের প্রকৃতির সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। ছেলেবেলার সময়টা ছিল আনন্দময়। পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে নানা খেলা ও গল্পে উৎসবমুখর সময় কাটতো। তখনকার দিনগুলো ছিল অনেকটাই নির্ভেজাল, যেখানে ছোট ছোট জিনিসেই খুশি হতাম। শৈশবে সবার দেখাদেখি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তবে এই স্বপ্ন পরিবর্তন হয়, যখন প্রফেসর আব্দুস সালামকে নিয়ে বায়োগ্রাফি ভিত্তিক একটা বই পড়ি। তখন থেকে গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি পেইন্টিংয়ের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলাম। এটি আমার সৃজনশীলতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জাগো নিউজ: ফ্রেডরিখ শিলার ইউনিভার্সিটি ইয়েনাতে পড়ার স্বপ্ন দেখলেন কখন থেকে?মো. আবদুল কাদের জিলানী: ড্যাফোডিলে স্নাতকের প্রথম বর্ষ থেকেই গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রতি আমার গভীর আগ্রহ ছিল। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক্স এবং অপটিক্সে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স খুঁজতে গিয়ে আমি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের লিস্ট তৈরি করি। তবে ফ্রেডরিখ শিলার ইউনিভার্সিটি ইয়েনার ফোটোনিক্স কোর্সটি বিশেষভাবে আমার পছন্দ হয়। তখন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি।
Advertisement
জাগো নিউজ: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার গল্প শুনতে চাই—প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?মো. আবদুল কাদের জিলানী: আমি স্নাতকের সময় থেকেই আমার সিজিপিএ ভালো রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। যাতে একাডেমিক প্রোফাইলে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়। পাশাপাশি কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশ করাও আমার প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। যা আমার প্রোফাইলকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। স্নাতক শেষের পর আইইএলটিএস পরীক্ষা দিই। এটি আবেদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ইংরেজি দক্ষতা প্রমাণের জন্য এই পরীক্ষার ভালো স্কোর নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। চূড়ান্ত আবেদন করার আগে, আমি একটি মোটিভেশন লেটার লিখি। যেখানে আমার আগ্রহ, লক্ষ্য এবং কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই—তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করি। সেই সঙ্গে রেফারেন্সের জন্য আমার প্রফেসরদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাদের কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করি। সব প্রস্তুতি শেষে ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবেদন সম্পন্ন করি। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষার পর, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমি অফার লেটার পাই।
আরও পড়ুন
জানার জন্য প্রচুর পড়তে হবে, মুখস্থ করার জন্য নয় বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে যা করবেনজাগো নিউজ: উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিকে বেছে নেওয়া হয় কেন?মো. আবদুল কাদের জিলানী: জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও শিক্ষার মান অত্যন্ত উন্নত। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের মধ্যে। জার্মানিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মানের শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং প্রোগ্রামগুলোর বেশিরভাগই ইংরেজি মাধ্যম। জার্মানিতে বেশিরভাগ রাজ্যে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রি, যা দেশটিকে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
জাগো নিউজ: এই ইউনিভার্সিটিতে পড়তে কীভাবে আবেদন করতে হয়?মো. আবদুল কাদের জিলানী: আবেদনের পদ্ধতি বেশ সহজ এবং সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক। প্রথমে নির্দিষ্ট পোর্টালে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। তারপর ফর্ম পূরণ করতে হয়, যেখানে ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত সম্পর্কিত তথ্য থাকবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে অনলাইনে সাবমিট করতে হয়। আবেদন করার সময় কোনো ডকুমেন্টস কুরিয়ার করে পাঠানোর প্রয়োজন হয় না। তবে অফার লেটার পাওয়ার পর ডকুমেন্টস কুরিয়ার করতে হয়। আর মাস্টার্স ইন ফটোনিক্স প্রোগ্রামে আবেদন করতেও কো আবেদন ফি নেই। আবেদনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট, এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট, স্নাতকের সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট, সিভি, মোটিভেশন লেটার, ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি, রেকমেন্ডেশন লেটার, স্নাতক কারিকুলাম ইত্যাদি দিতে হবে। জাগো নিউজ: স্কলারশিপে কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে?মো. আবদুল কাদের জিলানী: আমি ‘আবে স্কুল অব ফটোনিক্স স্কলারশিপে’ পড়াশোনা করছি। এ স্কলারশিপের আওতায় প্রতি মাসে ৯৩৪ ইউরো প্রদান করা হয়। অতিরিক্তভাবে জার্মান ভাষার কোর্সের ফি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে।
Advertisement
জাগো নিউজ: যারা স্কলারশিপে পড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?মো. আবদুল কাদের জিলানী: স্নাতকে পড়াবস্থায় সিজিপিএ ভালো রাখার চেষ্টা করুন। জার্মানিতে সিজিপিএকে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণা ও ইন্টার্নশিপ অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন। কারণ এটি স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। সবশেষে ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান এবং আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য মনোযোগী থাকুন।
এসইউ/এমএস