দেশজুড়ে

অর্থের অভাবে বন্ধ গুলিবিদ্ধ জরিফুলের চিকিৎসা, অন্ধকারে পরিবার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন জরিফুল ইসলাম। পরে সেই গুলি বের করা হলেও হাড় ভেঙে যাওয়ায় হাঁটতে পারছেন না তিনি। চিকিৎসার অভাবে বাড়িতে বিছানায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। অভাবের সংসারে এখন ওষুধ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না জরিফুল।

Advertisement

জরিফুল ইসলাম পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আয়-রোজগার না থাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা পূর্ব সারডুবীন গ্রামের আব্দুর সাত্তার ছেলে জরিফুল ইসলাম। তিনি ঢাকার সাভারে একটি দোকানে মুরগির মাংস বিক্রি করতেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন জরিফুল। দিনব্যাপী পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এসময় জরিফুলের বাম পায়ে একটি গুলি লাগে। অন্য ছাত্ররা তার পা থেকে গুলি বের করার সময় একই পায়ে আরেকটি গুলি লাগে তার। এসময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

Advertisement

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন মেডিকেলে নিয়ে গেলেও ছাত্রলীগ ও পুলিশের বাধায় চিকিৎসা হয়নি তার। পরে দূরের একটি হাসপাতালে অপারেশন করে পা থেকে তার গুলি বের করা হয়। পরে জানতে পারেন তার পায়ের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। এরপর গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসা নেন।

জরিফুল ইসলামের স্ত্রী রেজিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বামীর রোজগারের টাকায় সংসার চলতো। এখন আমার স্বামী পঙ্গুত্ববরণ করে বাড়িতেই পড়ে আছেন। ধারদেনা করে সংসার চলছে, স্বামীর চিকিৎসা করাবো কী করে? কেউ কি নেই আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। সন্তান দুটিকে মানুষ করবো কীভাবে?’

জরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন সাভার এলাকায় ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেই। ছাত্রদের পানি থেকে শুরু করে সবকিছুই সরবরাহ করি। এসময় আমার বাম পায়ে পরপর দুটি গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পঙ্গুত্ববরণ করে বাড়িতেই পড়ে আছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৮০০-৯০০ টাকার ওষুধ লাগে। এত টাকা আমি কই পাই? আমার চিকিৎসা, সংসারইবা চলবে কী করে? সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চাই। যারা আমাকে গুলি করেছে তাদেরও বিচার চাই।’

Advertisement

বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, ঢাকায় আন্দোলনের সময় জরিফুলের পায়ে গুলি লাগে। তিনি অত্যন্ত গরিব। বিত্তবানদের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো।

এ বিষয়ে বড়খাতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য নাজমুস শাকিব জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কাল তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। আমরা ছাত্র সংগঠন থেকে তাকে সহযোগিতা করবো।’

রবিউল হাসান/এসআর/জিকেএস