কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্যার পানি। এতে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৪৫টি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। এদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, রাজনৈতিক কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। এরইমধ্যে অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার বেশি বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় বানভাসিদের রসদ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে ছাত্রসমাজ।
Advertisement
বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার নীলকান্ত সরকারি ডিগ্রি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এ পরিস্থিতি।
আশ্রয়কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল কাদের সাহাগ জাগো নিউজকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের আশপাশের ১৬টি গ্রাম থেকে ৭০০’র বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এসব মানুষের দু’বেলা খাবার যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা। এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা এখানে আসেনি। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৫০ জন ছাত্র-জনতা নিরলস কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, এই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ কেজি চাল রান্না করতে হয়। এর সঙ্গে আনুষাঙ্গিক সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয় একদিনে। গত ২২ আগস্ট থেকে তারা এই আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
Advertisement
সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সোহাগ সরকার বলেন, আপনারা মানবিকভাবে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমরা মানবকল্যাণে কাজ করছি। মনোহরগঞ্জের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, স্বাভাবিক হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। সুতরাং আমাদের ভারী ত্রাণ (চাল, ডাল, তেল ও আলু) দিয়ে সহায়তা করুন।
আশ্রয়কেন্দ্রের সমন্বয়ক আক্তারুজ্জামান মুন্না জাগো নিউজকে বলেন, বানভাসিদের ভালো রাখতে আমরা ৫০ জন একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সংস্থার কাছে ত্রাণের জন্য আকুতি জানাচ্ছি। তিনটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে দিন-রাত ছুটছি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে। পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বর্তমানে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। শিশু খাদ্য, নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ও প্রাথমিক ওষুধ দিয়ে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, নীলকান্ত সরকারি ডিগ্রি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রের বিষয়ে এরইমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়েছি। আজকের মধ্যেই সেখানে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হবে। এছাড়াও উপজেলায় বানভাসিদের জন্য ১০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে যেসব মানুষ পানিবন্দি রয়েছে, তাদের উদ্ধার এবং খাবার পৌঁছানোর জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন চাল, কিছু শুকনো খাবার এবং নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্গম গ্রাম চিহ্নিত করে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলোকেও রোড ম্যাপ দেওয়া হচ্ছে। তারা সেখানে নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
Advertisement
জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/এএসএম