চলমান বন্যা সংকটে লক্ষ্মীপুরে সরকারি-বেসরকারি খাদ্য সহায়তা (ত্রাণ) বিতরণে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে থাকায় এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে লক্ষ্মীপুরে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলার ৫৮ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে এখন অন্তত ৪০ জনই পলাতক। এরমধ্যে অন্তত ৮ জন হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন। একজনকে ইউনিয়ন পরিষদে প্রকাশ্যে পিটিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়, অন্য আরেকজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এসব ইউনিয়নের ৪ শতাধিক সদস্য (মেম্বার) ও পৌরসভাগুলোর ৩০ জন কাউন্সিলরকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন।
এদিকে বুধবার জেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তারপরও জেলার ৮ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। বিভিন্ন এলাকায় এক ফুটের মতো পানি কমেছে। তবে প্রত্যেকটি বাড়ি, গ্রাম এমনকি মাইলের পর মাইল শুধু থই থই পানি। গ্রামীণ অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর ওপর ৩-৪ ফুট পানি রয়েছে। কোথাও কোথাও কোমর-গলা সমান পানি জমে আছে।
Advertisement
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪-৫ দিন ধরে লক্ষ্মীপুরে সরকারি-বেসরকারি খাদ্য সহায়তা (ত্রাণ) আসছে। কিন্তু গ্রামীণ অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর ওপর ৩-৪ ফুট পানি রয়েছে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ঢোকা যাচ্ছে না। এর ওপর দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাহায্যকারীদের কাছে রাস্তাঘাট অচেনা। কোন এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বেশি তারা জানেন না। কার মাধ্যমে, কীভাবে কোথায় যেতে হবে তারও সঠিক নির্দেশনা তারা পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের প্রায় প্রত্যেক গ্রাম ও বাড়ি চেনা এবং কার কী অবস্থা তা জানা থাকে। কার মাধ্যমে কোথায়, কীভাবে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব তা মেম্বারদের ভালো জানার কথা। কিন্তু তারা এলাকাছাড়া হওয়ায় সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে অধিকাংশ পানিবন্দি মানুষ। এতে গ্রামীণ রাস্তার পথিমধ্যে গিয়ে অনেকেই স্থানীয়দের মধ্যে ত্রাণ দিয়ে আসেন। এলাকাভেদে একেকজন ৪-৫ বার সহায়তা পেলেও অনেকেই একবারও পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুরের ৫ জন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মামলা-হামলা ও অপমান-অপদস্তের আশঙ্কায় তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়াও অধিকাংশ মেম্বার এলাকায় নেই। কোন বাড়িতে কার কী অবস্থা, কাকে ডাকতে হবে, কীভাবে যেতে হবে সবকিছুই জনপ্রতিনিধিদের জানা আছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীতা দেখা দিয়েছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নে ত্রাণ পাঠাচ্ছি। তবে অনেক জনপ্রতিনিধি এলাকায় নেই।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক ইয়াসিন মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে লক্ষ্মীপুরে সৃষ্ট ঘটনায় আলাদা ৪টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান চলছে।
Advertisement
অপরদিকে সরকারিভাবে যে বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান। তিনি বলেন, বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বন্যা দুর্গতদের জন্য ৭০০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ মেট্রিকটন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
এফএ/এএসএম