স্বামী-স্ত্রী দুজনই মাদরাসায় চাকরি করেন। স্বামী শিক্ষক পদে আর স্ত্রী আয়া। তবে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না তারা। আওয়ামী লীগের দাপটে মাসের পর মাস দায়িত্ব পালন না করেই নিয়মিত বেতন-ভাত উত্তোলন করছেন এই দম্পতি।
Advertisement
এমনই ঘটনা ঘটেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাটাবুগা দাখিল মাদরাসায়। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম রমজান আলী। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক। তার স্ত্রী আঞ্জুমনোয়ারা একই মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (আয়া)।
অভিযুক্ত দম্পতিকে অপসারণ দাবিতে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৫ আগস্ট) ভুক্তভোগী কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মাদারাসা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পাটাবুগা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক রমজান আলী ২০২২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী আঞ্জুমনোয়ারাকে একই মাদরাসায় আয়া পদে নিয়োগ দেন। এরপর প্রায় দুই বছর ধরেই আঞ্জুমনোয়ারা স্বামীর প্রভাব ও সুপারিনটেনডেন্ট আইয়ুব আলীর যোগসাজশে মাদরাসায় উপস্থিত না হয়েই নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তিনি মাসে মাত্র ১-২ দিন উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের সই দিয়ে যান।
Advertisement
অভিযোগ পেয়ে ১১ আগস্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক মাদরাসার সুপারকে লিখিতভাবে সতর্কীকরণ নোটিশ দেন। এরপর আয়া প্রতিদিন মাদরাসায় এলেও শুধু হাজিরা খাতায় সই করে অফিসকক্ষে বসে থাকেন। দুপুরের দিকে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে চলে যান। আয়ার কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা চাইলে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর তিনি চড়াও হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, ‘আয়া আঞ্জুমনোয়ারা ঠিকমতো মাদরাসায় আসেন না। কখনো এলে তার সঙ্গে কথা বলা যায় না। তাকে ‘খালা’ ডাকলে রেগে যান, ‘ম্যাডাম’ ডাকতে বলেন। কক্ষ পরিষ্কার করা তার দায়িত্ব হলেও তিনি কখনোই তা করেন না। ছাত্রদের দিয়েই করান। কেউ পানি চাইলেও তার স্বামী রমজান স্যার এসে ছাত্রদের ভয় দেখান। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।”
মাদরাসার নিরাপত্তাকর্মী রূহুল আমিন বলেন, আঞ্জুমনোয়ারা এবং তিনি একসঙ্গেই চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত মাদরাসায় দায়িত্ব পালন করলেও আয়া অনুপস্থিত থাকেন। শুধু মাস শেষে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন তুলে নেন। আয়ার কাজগুলোও অন্য কর্মচারীদের করতে হয়।
অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, আয়া ও তার স্বামীর অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা যায় না। কিছু বললেই সুপারকে দিয়ে শোকজ ও চাকরিচ্যুতির হুমকি, বহিরাগত ক্যাডার এনে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখান।
Advertisement
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষক রমজান আলী ও তার স্ত্রী আঞ্জুমনোয়ারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট আইয়ুব আলীর ফোনে কল করা হলে তিনি জরুরি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, মাদরাসা পরিদর্শনে আয়ার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও কোনো কাজ না হওয়ায় ১১ আগস্ট সুপারকে পত্র মারফত সতর্ক করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাসিম উদ্দিন/এসআর/জিকেএস