শৈশবে ফুল চুরি করতেন দুই বোন। বড় হয়ে কোটি মানুষের মন চুরি করেছেন। দুজনে মিলে গেয়েছেন অনেক অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান। সারা বছর বিভিন্ন সময় সেই গানগুলো মানুষকে প্রশান্তি দেয়। আজ সামিনা চৌধুরীর জন্মদিনে বেড়ে ওঠা সময়ের স্মৃতির কপাট খুলে ধরলেন বড় বোন ফাহমিদা নবী।
Advertisement
দুই বোনের মধ্যে সামিনা পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। পড়তেন বড় বোনের এক ক্লাস নিচে। একই স্কুল, একই কলেজে। স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করার জন্য দুজনের একসঙ্গে ডাক পড়তো। এ রকম অনেক মধুর স্মৃতিতে ভরা তাদের ছোটবেলা। দুই বোনের মধ্যে ঝগড়া হতো গান নিয়েই। জন্মদিনে দূরে থাকা বোনকে স্মরণ করে ফাহমিদা বলেন, ‘সুমার (সামিনা চৌধুরীর ডাকনাম) জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। ওর সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি। এবারের জন্মদিনে ও দেশের বাইরে থাকায় খুব মিস করছি ওকে।’
মনে করিয়ে দেওয়া যাক সামিনার বেশ কয়েকটি শ্রোতাপ্রীত গানের কথা। ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে মন যেখানে হৃদয় সেখানে’, ‘আমার মাঝে নেই এখন আমি’, ‘হও যদি ঐ নীল আকাশ’ গানগুলো নতুন প্রজন্মের অনেকেরই শোনা। তাদের অনেকেই হয়তো জানেনই না যে, গানগুলো গেয়ে দেশ মাতিয়েছিলেন সামিনা চৌধুরী। গানগুলোর জন্য মানুষের ভালোবাসা, প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান, জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
দেশের ঐতিহ্যবাহী এক সংগীত পরিবারে জন্মেছেন সামিনা চৌধুরী। বাবা কিংবদন্তিসম শিল্পী মাহমুদুন্নবী। বাবার সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভাইবোনেরাও। ফাহমিদা, সামিনার ভাই পঞ্চমও জনপ্রিয় শিল্পী।
Advertisement
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সামিনা চৌধুরী। দেশটির কয়েক জায়গায় গান করার কথা রয়েছে তার। আসছে নভেম্বর মাসে তিনি দেশে ফিরবেন। সামিনার জন্মদিন উদযাপন প্রসঙ্গে ফাহমিদা নবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের বহু মানুষ বন্যাকবলিত। এই মুহূর্তে সামিনার জন্মদিন উদযাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই।’ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই শিল্পী বলেন, ‘অনেকে বলেন, সামিনা আমার থেকে বড়, আমি ওর ছোট। এমনটা আমাকে মাঝেমধ্যেই শুনতে হয়। সামিনা একটু চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে, কিছুটা অন্তর্মুখী স্বভাবের, শান্ত। আমি চটপটে, চঞ্চল মানুষ। বলা যায়, মানুষ পেলে বকবক করতেই থাকি। এ কারণেই হয়তো সবাই ওকে আমার বড় মনে করে। ও ছোটবেলা থেকেই অনেক লক্ষ্মী মেয়ে।’
শৈশবের মজার স্মৃতি স্মরণ করে ফাহমিদা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমাদের দুই বোনের গভীর বন্ধুতা। সব আনন্দ দুজনে শেয়ার করেছি। বলা চলে, সব কাজ আমরা একসঙ্গে মিলে করেছি। ছোটবেলা থেকে ফুলের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা ছিল। ফুল চুরি করতে গেলেও সামিনা আমার সঙ্গী হতো। আমি ফুল তুলে ওর কাছে দিতাম। শুধু ফুলই নয়, সামিনা আমার আম এবং পেয়ারা চুরিরও সঙ্গী ছিল।’
শিল্পী হিসেবে সামিনা চৌধুরীকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এ প্রশ্নে নির্দ্বিধায় ফাহমিদা বলেন, ‘বাংলাদেশের গানের জগতে সামিনা চৌধুরী একজনই। এ রকম দ্বিতীয় কোনো সামিনা চৌধুরী তৈরি হওয়া দুঃসাধ্য। ওর গানের তুলনা ও নিজেই। ও শুধু একজন ভালো শিল্পীই নয়, ব্যক্তি-সামিনা হিসেবেও সে অসাধারণ। সামিনা ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কারণ ওর শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করার। কিন্তু একপর্যায়ে গানের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় ওর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে এখনো সে মানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলেই সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।’
সামিনা চৌধুরী আধুনিক গানের পাশাপাশি চমৎকার রবীন্দ্রসংগীতও করেন। প্লেব্যাকে তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর তিনি একের পর এক সিনেমায় গান করেছেন। ‘শৈশবের দিনগুলো’ শিরোনামে সামিনা চৌধুরীর প্রথম অডিও অ্যালবাম বের হয় ১৯৮৬ সালে।
Advertisement
এমএমএফ/আরএমডি/এমএস