ফিচার

নজরুলের শৈশব চিরন্তন অনুপ্রেরণা জোগাবে

হারুন অর রশিদ

Advertisement

আজ ১২ ভাদ্র ১৪৩১, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার জীবনের চিরন্তন স্মৃতির দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, বাংলা সাহিত্যের অমর নক্ষত্র হিসেবে স্থায়ীভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।

কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সৃষ্টির আকাশে যেমন উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবনও দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যে কাটিয়েছেন। ছোটবেলায় তার জীবন ছিল ভীষণ কঠিন। মাত্র ১০ বছর বয়সে পিতৃহারা দুঃখী বালক কাজী নজরুল ইসলাম আসানসোলের একটি রুটির দোকানে রুটি বেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উঠে এসে তিনি যে জীবন সংগ্রামের সূচনা করেন, তা ছিল এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

দারিদ্র্য এবং সংগ্রাম তাকে গড়ে তুলেছিল এক বিদ্রোহী সত্তায়। একদিকে অভাবের তীব্রতা, অন্যদিকে তার অদম্য মানসিকতা এবং সাহসিকতা তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সেই কষ্টের মধ্যেও তিনি সাহিত্যিক এবং মানবতাবাদী চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠেন। তার সাহিত্যিক কীর্তি এবং মানবতার প্রতি অনুরাগ তার শৈশবের সেই অভিজ্ঞতা থেকেই উদ্ভূত।

Advertisement

আরও পড়ুনরবীন্দ্রনাথের আসল বংশ পদবি কী ছিল জানেন?

নজরুল ইসলাম বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্যজগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলা লেটোগান, যা গ্রামের মানুষের বিনোদনের এক জনপ্রিয় মাধ্যম, এর মাধ্যমে গান, কবিতা এবং অভিনয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। লেটোগানের দিনগুলোতে নজরুল কেবল গান ও নাটকের চর্চাই করেননি, বরং বাংলার গ্রামীণ সমাজের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন। এই অভিজ্ঞতা তার পরবর্তী লেখনীগুলোর মূল অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। গ্রামীণ জীবন ও মানুষের সমস্যা নিয়ে তার গভীর সংবেদনশীলতা এবং সচেতনতা তার সৃষ্টির এক অপরিহার্য অংশ।

আমাদের ছেলেবেলার নজরুলের প্রতি যে টান, তা কেবল তার লেখার জন্য নয়, বরং তার সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব জীবনের প্রতিফলনের কারণে। নজরুলের জীবনী পড়ার সময় সেই দুখু মিয়ার ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এক অদম্য বালক, যিনি ভোরের কুয়াশার মধ্যে রুটি বেলে যাচ্ছেন, এই চিত্র আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং সংগ্রামী জীবন আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

আসানসোলের সেই রুটির দোকানের দৃশ্য আমাদের মনের গভীরে এমনভাবে মিশে গেছে যে নজরুলের নাম শুনলেই আমরা সেই উনুনের ধোঁয়া, রুটির ভাপ, আর কয়লার ফুলকি দেখতে পাই। রুটির আকার, গন্ধ যেন নজরুলের জীবনসংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই দৃশ্যগুলো আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় নজরুলের কঠোর সংগ্রামের কথা এবং তার সাহসিকতার কথা।

আজকের দিনে যখন নজরুলের গান, কবিতা, কিংবা তার জীবন নিয়ে ভাবি, তখনও সেই আসানসোলের রুটির দোকানের কথা মনে পড়ে এক নিরলস বালক, যার চোখে স্বপ্ন, হাতে শক্তি, আর হৃদয়ে বিদ্রোহের আগুন। তার সংগ্রামী জীবন এবং সাহসিকতা আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা তার মতো দৃঢ়, সাহসী এবং অবিচল থাকতে শিখি।

Advertisement

আজ নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীতে, আমরা দুখু মিয়ার সেই শৈশবের স্মৃতিগুলোকে মনে করি, যেখানে একটি ছোট্ট রুটির দোকানে বসে তিনি তার জীবনের প্রথম পাঠ শিখেছিলেন। এই স্মৃতি আমাদের কাছে এক অনুপ্রেরণার উৎস, যা আমাদের সংগ্রাম ও পরিশ্রমের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে। দুখু মিয়ার জীবন এবং তার কাব্যিক সৃষ্টির মধ্যে আমরা আজও তার অমলিন অধ্যায় দেখতে পাই, যা আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করে যাবে।

নজরুল ইসলামের জীবন এবং সৃষ্টির মাঝে আমরা সেই প্রতিটি অধ্যায় দেখতে পাই যা আমাদের সাহস, দৃঢ়তা, এবং সংগ্রামের মূল্য বোঝায়। তার সাহিত্য এবং কাব্যিক সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে কীভাবে এক অদম্য মনোভাব, কঠোর পরিশ্রম এবং মানবিকতার সঙ্গে জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়। নজরুল ইসলামের জীবন এবং কর্মের প্রতি আমাদের এই সম্মান ও শ্রদ্ধা চিরকাল অম্লান থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ

আরও পড়ুন বাঙালির মানস গঠনে নজরুল ইসলামের ভূমিকা বিবাহিত পুরুষদের অপছন্দ ভুতুড়ে ব্রাইডাল পুতুলের

কেএসকে/এএসএম