বর্ষার শেষ সময়ে এসে অবিরাম বর্ষণের পানি নামতে গিয়ে নানা স্থানে দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ছে কক্সবাজার সৈকতের বেলাভূমি। এতে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজার। প্রতিদিন বেলাভূমি ভাঙলেও তা রদে কার্যত কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৈকত রক্ষার নামে কোটি টাকা লোপাট করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
Advertisement
সরেজমিন দেখা যায়, সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা এবং কলাতলী পয়েন্টসহ সৈকতের একাধিক এলাকা দিয়ে বৃষ্টির পানি নামতে গিয়ে স্রোতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ছে বেলাভূমি। এসব পয়েন্টে সৈকতে নামার দুপাশ এবং ওপরের অংশে খালি জায়গাও দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছেন প্রভাবশালীরা। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় নিচু এলাকা দিয়ে পানি নামার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার শাহজাহানপুর থেকে বেড়াতে আসা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী দুই পয়েন্টে নেমে দেখি দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছে বেলাভূমি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্ষার পানি নামার ফলে এমন অবস্থা হয়েছে। অথচ এর আগে এমন অবস্থা কখনো দেখিনি।’
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে আসা পর্যটক আবির মাহমুদ বলেন, ‘সৈকতের সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট পর্যটকদের আনাগোনা বেশি। গুরুত্বপূর্ণ এসব পয়েন্ট ভেঙে যাওয়ায় বেড়ানোর আনন্দের চেয়ে বিরক্ত লাগছে।’
Advertisement
সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এসব পয়েন্ট দিয়ে বৃষ্টির পানি সাগরে নেমেছে বলে জানান সৈকতের বিচকর্মী জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, অতিমাত্রায় পানি নামায় বালি সরে গিয়ে এ ভঙ্গুর অবস্থা হয়েছে। শুরু থেকে পদক্ষেপ নিলে এমন হতো না।
হোটেল সি-প্রিন্সেসের সিনিয়র অফিসার মাজেদুল বশর সুজন বলেন, সৈকতের বেলাভূমিতে পর্যটকরা হাঁটতে ভালোবাসেন। বেলাভূমি দ্বিখণ্ডিত হয়ে চলাচল অযোগ্য হওয়ায় অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করছে। এসব বিষয় পর্যটনের জন্য নেতিবাচক।
হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (হিসাব-অর্থ) মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারকে পরিপাটি রেখে পর্যটকদের বিনোদন দেওয়া না গেলে ক্ষতির মুখে পড়বে পর্যটন শিল্প।
Advertisement
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্যি যে সৈকত ছাড়া কক্সবাজারে বেড়ানোর তেমন কোনো অপশন নেই। তাই বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রায় সব সভায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এমন স্থাপনা নির্মাণে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কক্সবাজার রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম। তিনি বলেন, আমাদের সমিতিভুক্ত সাড়ে তিনশোর মতো রেস্তোঁরা রয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক রেস্তোঁরা এখনো বন্ধ। পর্যটক যদি না আসে ক্ষতি পোষাতে না পেরে দেউলিয়া হতে হবে আমাদের।
অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার সৈকত রক্ষার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত কয়েক অর্থবছরে কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করেছে। মনগড়াভাবে সৈকতের বালি তুলে জিও ব্যাগ বসানোর কারণে সৈকত রক্ষা তো দূরের কথা, উল্টো ঢেউয়ের আঘাতে পাঁচ শতাধিক ঝাউগাছ সাগরে তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, আবারও যেহেতু ভাঙন দেখা দিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে সৈকত রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সৈকত রক্ষায় স্থায়ী সমাধানের জন্য ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘আসলে বাঁধ দিয়ে তো নদী শাসন করা যায় না। সৈকত রক্ষায় টেকনিক্যাল পদক্ষেপ নিতে হবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখছে। তারা হয়তো একটি সুরাহা বের করবেন। তারপরও প্রাথমিকভাবে করণীয় নির্ধারণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
এসআর/এএসএম