ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির বলেছেন, তিনি সুযোগ পেলে জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি ইহুদি উপাসনালয় তৈরি করবেন। তার এই বক্তব্য কেন্দ্র করে সৌদি আরব, কাতার, জর্ডানসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে নতুন করে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ইসরায়েলি সরকারের নীতিমালা নিয়েও।
Advertisement
সোমবার (২৬ আগস্ট) আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেন গভির বলেন, সম্ভব হলে আমি পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি সিনাগগ অর্থাৎ ইহুদি উপাসনালয় তৈরি করবো। আমার চাওয়া অনুযায়ী যদি আমি কিছু করতে পারতাম, তাহলে আমি ওই জায়গায় একটি ইসরায়েলি পতাকাও লাগাতাম। আল–আকসাকে ইহুদিরা তাদের ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘সবচেয়ে পবিত্র স্থান’ হিসেবে দাবি করে।
২০২২ সালে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তত ছয়বার ওই বিরোধপূর্ণ জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন বেন গভির। এ নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি মনে করেন, মসজিদটিতে ইহুদিদের প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
বেন গভিরের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জর্ডান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুফিয়ান কুদাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আল–আকসা এবং পবিত্র স্থানগুলো মুসলিমদের জন্য প্রার্থনা করার উপযুক্ত জায়গা। পবিত্র স্থানগুলোতে না হামলা চালাতে জর্ডান সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
Advertisement
পবিত্র স্থানগুলোতে হামলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক আদালতে জমা দেওয়ার জন্য জর্ডান প্রয়োজনীয় আইনি কাগজপত্র প্রস্তুত করছে বলেও উল্লেখ করেছেন সুফিয়ান।
সৌদি আরব এবং কাতারও ইসরায়েলি মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক ও আইনগত মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে সৌদি আরব।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সিনাগগ তৈরির ইঙ্গিতের নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে ‘পুরো বিশ্বের মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত’ বলে উল্লেখ করেছে। এ ধরনের বক্তব্যের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ক্ষুণ্ন হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে দেশটি।
শুধু মুসলিম দেশগুলোই নয়, কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তাও বেন গভিরের এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয় হয়েছে, বর্তমান নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
Advertisement
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, টেম্পল মাউন্টের মর্যাদাকে চ্যালেঞ্জ করাটা একটি বিপজ্জনক, অপ্রয়োজনীয় ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড। গ্যালান্ট আরও বলেন, বেন গভিরের কর্মকাণ্ড ইসরায়েল রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে।
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এক এক্স পোস্টে বলেছেন, বেন গভিরের বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে নেতানিয়াহু তার সরকারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ সতর্ক করেছেন, আল–আকসা ও পবিত্র স্থানগুলো হলো লাল রেখা, যেখানে কোনোভাবেই হাত দেওয়া যাবে না। এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, ইসরায়েলি মন্ত্রীর বক্তব্যটি বিপজ্জনক। তারা পবিত্র স্থানগুলোর সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা, এএফপি
এসএএইচ