জাগো জবস

গণিত ও ইংরেজির ওপর জোর দিয়েছি: আসাদ মাহমুদ শুভ

মো. আসাদ মাহমুদ শুভ বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ (২০২৩ ব্যাচ) পদে চাকরি পেয়েছেন। তিনি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব রতনপুর (চিলমারী) গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার গ্রামে বিদ্যুতের দেখা মেলে ২০১৮ সালে। ২০০৯ সালে তার ঘরে সৌর বিদ্যুৎ আনা হয়। তার আগে গ্রামের অন্যদের মতো পড়তে হতো হারিকেনের আলোয়। তিনি সিএইচএমএস রহমান স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

Advertisement

সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সহকারী পরিচালক’ পদে চাকরি পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন ছিল?মো. আসাদ মাহমুদ শুভ: বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদে চাকরি পাওয়ার আগে আমার রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ‘সিনিয়র অফিসার’ এবং জনতা ব্যাংকে ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে চাকরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পাওয়ার অনুভূতি এককথায় অসাধারণ! খুশিতে চোখে একটু পানি চলে এসেছিল। তখন আমি জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত। আমি আমার কলিগকে বলতে গিয়ে কথা থেমে আসছিল।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. আসাদ মাহমুদ শুভ: প্রথম বর্ষে থাকতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফবিএস বয়েজ কমনরুমে এক বন্ধু বলেছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির চাকরি নাকি খুবই ভালো একটি চাকরি—খুবই সম্মানের। তখনও বুঝতাম না, কীভাবে পড়লে এ চাকরি করা যাবে। তবে তখন থেকেই বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর চতুর্থ বর্ষে কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা একটি সেশন নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ফেসবুকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির চাকরির সুযোগ-সুবিধা দেখে মনে হয়েছিল, আমি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা হতে পারতাম! এসব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।

Advertisement

আরও পড়ুননতুনরা যেভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নেবেনযেভাবে ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ পেলেন জনী

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?মো. আসাদ মাহমুদ শুভ: করোনার তিন মাস লকডাউনের পর ঢাকায় আসি। ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে চাকরির ইন্টেন্সিভ প্রিপারেশন শুরু করি। শুরুতে ইংরেজি ভোকাব্যুলারি এবং ম্যাথের ওপর জোর দিয়েছি। তারপর প্রিভিয়াস কোশ্চেন ব্যাংক, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র বোর্ড বই, আইসিটি, অনুবাদ, রিটেন ম্যাথ, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, মাসিক সম্পাদকীয় পড়েছি। প্রিপারেশনের প্রথম তিন মাস আমি শুধু গণিত ও ইংরেজির ওপর জোর দিয়েছি। তখন নীট ৮-৯ ঘণ্টা করে পড়েছি। এরমধ্যে মোবাইল ব্যবহার ছিল। চাকরির প্রস্তুতির সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়া এবং ঈদে কোরবানির ছুটি বাদে কখনোই আমি পড়াশোনায় গ্যাপ দিইনি। শরীর খারাপ হলেও অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা পড়েছি। আমার মতো করে একটা নির্দিষ্ট রুটিনে পড়তাম। শুধু বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ায় নবম-দশম শ্রেণি থেকে আশেপাশের কিছু মানুষের কটূক্তির শিকার হয়েছি, যা আমার জেদ হিসেবে কাজ করতো। অথচ এখন আমার সহকর্মীদের প্রায় ৭০% ইঞ্জিনিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ডের।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে সব সময় কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?মো. আসাদ মাহমুদ শুভ: আমার প্রতি মায়ের চাওয়া-পাওয়াটাই ছিল পর্দার আড়ালের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আম্মা চাইতেন, আমি একদিন বড় কিছু হই। আমার বাবারও স্বপ্ন ছিল আমি বড় কিছু হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ২৯ দিন আগে আমার আব্বা মারা যান। ২০২২ সালের ৬ মে আমার আম্মা মারা যাওয়ার ৮৮ দিন পর আমার প্রথম চাকরি পাওয়ার সুসংবাদ আছে। আমার সফলতা আমার আম্মা দেখে যেতে পারেননি। এ ছাড়া আমার ভাই-বোনের চাওয়া-পাওয়া ছিল, আমি বড় কিছু হই। আমার পড়াশোনার পেছনে বড় ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। এ ছাড়া চাকরির প্রস্তুতিতে আমার তিন বন্ধু রিফাত, আউয়াল, শাওনের পরামর্শ কখনোই ভোলার মতো নয়। অবশ্যই আমার শিক্ষকদের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে নতুনরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?মো. আসাদ মাহমুদ শুভ: ইংরেজি এবং ম্যাথ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বেশি করে ইংরেজি এবং ম্যাথে দক্ষতা বাড়ান। ম্যাথ নিয়মিত অনুশীলনের ব্যাপার। ম্যাথ অ্যানালিটিকাল দক্ষতা বাড়ায়। আর ইংরেজি তো সব জায়গায় লাগেই। বিশেষ করে ভোকাব্যুলারি আপনাকে আপনার মনের অজান্তেই প্রিলি রিটেন সব জায়গায় বেনিফিট এনে দেবে। পত্রিকা পড়েন নিয়মিত। আমার পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল না। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই, তারা প্রতি মাসে সম্পাদকীয় পড়তে পারেন। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখুন। পরীক্ষার খাতায় রিলেটেড প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া বাড়তি কোনো কিছু লিখবেন না। পেজ ভরাট করার উপরে কোনো মার্কস নির্ভর করে না, মার্কস নির্ভর করে কন্টেন্টের ওপর। পরীক্ষার সময় টাইম সেন্সের ওপরে জোর দেবেন। প্যানিকড হবেন না। সব সময় সৃষ্টিকর্তাকে ডাকবেন। তার ওপরে ভরসা করবেন, প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ পরিশ্রমকে কখনো বিফল হতে দেন না।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. আসাদ মাহমুদ শুভ: ভবিষ্যতে সততার সঙ্গে দেশের স্বার্থে কাজ করতে চাই। সমাজে ন্যূনতম একটা সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। খুব বেশি কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম