তীব্র দাবদাহের পর একটু বৃষ্টিতে রাজধানীবাসী যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল ঠিক তখনই বজ্রপাতের মতো এলো কারওয়ান বাজারের হাসিনা মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের খবর। রোববার সন্ধ্যায় লাগা আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় দুই শতাধিক দোকান।এরসঙ্গে পুড়ে গেছে কতো মানুষের স্বপ্ন- যারা এই মার্কেটে ব্যবসা করেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। এতে কম করে হলেও ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার। ব্যবসায়ীরা এই ক্ষতি কি করে পুষিয়ে নেবে সেটিই এখন ভাবনার বিষয়। কারওয়ান বাজারের হাসিনা মার্কেটের নিচতলায় একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তা মুহূর্তেই পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। ওই মার্কেটে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দোকান, আড়ত, লেপ-তোশক ও খাবারের হোটেল ছিল। মার্কেটটি কাঠ এবং টিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় আগুন লাগার পর তা দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ২৬টি ইউনিট কাজ করে। অনেক চেষ্টার পর রাত সোয়া ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের কথা বলেন। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার নানা দুর্বল দিক। আগুন নেভানোর প্রধান উপকরণ পানির স্বল্পতা অগ্নিকাণ্ডকে প্রলম্বিত করেছে। রাজধানীতে প্রয়োজনীয় জলাশয় না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া পানির উপরেই ভরসা করতে হয়েছে। এজন্য পানির উৎস বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া শুধু পানির উপর নির্ভর না করে ফোম বা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। এছাড়া উৎসুক জনতার কারণে যেন ফায়ার সার্ভিসের কাজ বিঘ্নিত না হয় সেটিও দেখতে হবে। বাজারটি ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। এর অবকাঠামো বলতে কিছু ছিল না। যে যেভাবে পারে দোকান সাজিয়েছে। দোতলা করা হয়েছে কাঠের পাটাতন ব্যবহার করে। এগুলো দেখার কি কেউ নেই? এখন যে অগ্নিকাণ্ডে কত মানুষের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল কে নেবে এর দায়ভার? কারওয়ান বাজারের কাঁচা বাজারটি সরিয়ে নেওয়ার কথা উঠেছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে এ রকম একটি মার্কেট থাকতে পারে কিনা সেটি নিয়ে সক্রিয়ভাবে ভাবতে হবে। এছাড়া যে সমস্ত ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের বিষয়টিও দেখতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্যোগ এড়ানো যায় সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। এইচআর/এমএস
Advertisement