অর্থনীতি

বন্দরে ফের কনটেইনার-জাহাজ জট, পানগাঁওয়ে পণ্য খালাসের উদ্যোগ

বন্যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিশেষ করে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মীরসরাই অংশে বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরে কনটেইনার জটলা ফের বাড়ছে। গত তিনদিনে তিন হাজার কনটেইনার নতুন করে জমা হয়েছে বন্দরে। পাশাপাশি বেড়েছে বহির্নোঙরে খালাসের অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যাও।

Advertisement

বন্দরের জট কাটাতে পানগাঁওয়ে আমদানি পণ্য খালাসের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সব আমদানি-রপ্তানিকারককে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথযোগে আমদানি-রপ্তানির ধারা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর জুলাইয়ের মধ্যবর্তী সময় থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এতে কারফিউসহ আন্দোলনকারীদের শাটডাউন কর্মসূচিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। যেসব আমদানিপণ্য জাহাজ থেকে বন্দরে নামে সেগুলো নিয়মিত খালাস না হওয়ায় কনটেইনারের জটলা তৈরি হয় সেসময়।

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে কনটেইনার ও জাহাজ জট। এরই মধ্যে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বিশেষ করে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের মীরসরাই অঞ্চলে বন্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এতে বন্ধ হয়ে যায় দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

Advertisement

বন্যায় রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় রেল চলাচলও। এতে বন্দর থেকে পণ্য খালাস ব্যাহত হয়। আবার বাড়তে থাকে কনটেইনারের সংখ্যা। সবশেষ গত তিনদিনে বেড়ে যায় প্রায় তিন হাজার কনটেইনার।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট, জাহাজ ছাড়তে বিলম্বচট্টগ্রাম বন্দরে পে-অর্ডার জটিলতা, ক্ষতির মুখে আমদানি-রপ্তানিস্থিতি আসেনি ব্যবসা-বাণিজ্যেখাতুনগঞ্জে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি, ব্যবসায় মন্দা

বন্দর সূত্র জানায়, সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৯ হাজার ২৪৭ টিইইউএস (২০ ফুট একক হিসেবে) কনটেইনার ছিল। যার বেশিরভাগই আমদানিপণ্য ভর্তি। আগের দিন ছিল ৩৭ হাজার ৯৯৬ টিইইউএস এবং তার আগের দিন শনিবার ছিল ৩৬ হাজার ৫৯৮ টিইইউএস কনটেইনার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৫৩ টিইইউএস কনটেইনার বন্দর থেকে ডিসচার্জ হয়। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ডিসচার্জ হয় ১৬৪৭ টিইইউএস কনটেইনার। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে ৩১ হাজার টিইইউএস কমবেশি কনটেইনার থাকে। ঠিক একমাস আগে ৪১ হাজার টিইইউএস কনটেইনার জমে গিয়েছিল বন্দরে। আগস্টের মাঝামাঝি আবার ৪৪ হাজারে ঠেকেছিল।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৯ হাজার ২৪৭ টিইইউএস (২০ ফুট একক হিসেবে) কনটেইনার ছিল। যার বেশিরভাগই আমদানিপণ্য ভর্তি। আগের দিন ছিল ৩৭ হাজার ৯৯৬ টিইইউএস এবং তার আগের দিন শনিবার ছিল ৩৬ হাজার ৫৯৮ টিইইউএস কনটেইনার।

বন্দরের তথ্য হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ হাজার ১৩৪ টিইইউএস। এর মধ্যে আমদানিপণ্য ভর্তি ৩ হাজার ৮৯৩ টিইইউএস কনটেইনার জাহাজ থেকে বন্দরে নেমেছে। আবার জাহাজীকরণ হয়েছে খালি ও রপ্তানিপণ্য বোঝাই ৪ হাজার ২৪১ টিইইউএস কনটেইনার। একই সময়ে আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো-ঢাকা) ও পানগাঁও আইসিটিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল) পাঠানোর জন্য ৯৫ টিইইউএস কনটেইনার জাহাজ থেকে গ্রহণ করে বন্দর। এর মধ্যে ৪১ টিইইউএস কনটেইনার বন্দর থেকে আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে। একইভাবে ১ হাজার ৪০২ টিইইউএস খালি কনটেইনার ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে পাঠানো হয় এবং ৭২৬ টিইইউএস খালি কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়।

Advertisement

বর্তমানে কনটেইনার ও বিভিন্ন বাল্ক পণ্যবাহী ১০০টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। এসপিএল বার্থ এবং মেইন জেটিতে খালাস ও জাহাজীকরণের জন্য জাহাজ রয়েছে ১৯টি। পাশাপাশি বহির্নোঙরে রয়েছে ৮১টি জাহাজ। এর মধ্যে কনটেইনারবাহী ১৪টি জাহাজ বন্দরে বার্থিংয়ের অপেক্ষায়। বহির্নোঙরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৫টি জাহাজ। একই সঙ্গে ৩২টি জাহাজ খালাস সাধারণ কার্গো, খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার এবং ৫টি অয়েল ট্যাংকার আমদানিপণ্য খালাস করছে।

এ বিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর বন্যার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনে ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে, গত কয়েকদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেল বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আমদানিকারকদের পণ্য আটকে যায় বন্দরে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এসব পণ্য খালাস সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে ৪৪ হাজারের অধিক কনটেইনার জমে গিয়েছিল বন্দরে। পরবর্তীসময়ে দ্রুত পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণের কারণে ৩৬ হাজারে নেমে এসেছিল। এখন আবার ৩৯ হাজারের বেশি হয়ে গেছে।’

আমরা নদীপথে পানগাঁওয়ে কনটেইনার নিয়ে খালাস করার জন্য আমদানিকারকদের অনুরোধ করেছি। এজন্য আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তা চেয়েছি। এখন চাইলে যে কোনো আমদানিকারক পানগাঁও থেকে পণ্য খালাসের সুযোগ নিতে পারেন।- বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক

তিনি বলেন, ‘আমরা নদীপথে পানগাঁওয়ে কনটেইনার নিয়ে খালাস করার জন্য আমদানিকারকদের অনুরোধ করেছি। এজন্য আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তা চেয়েছি। রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে সাড়া দিয়েছে। এখন চাইলে যে কোনো আমদানিকারক পানগাঁও থেকে পণ্য খালাসের সুযোগ নিতে পারেন। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সব ধরনেরর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

পানগাঁওয়ে পণ্য খালাসের পদক্ষেপগত রোববার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পানগাঁও টার্মিনাল দিয়ে আমদানিপণ্য খালাসের জন্য আমদানিকারকদের অনুরোধ করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্ভূত কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিষয়টি বিবেচনায় এনে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথ ব্যবহার করে দেশের আমদানি-রপ্তানি বেগবান করতে পানগাঁওস্থ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছে। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত।’

আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির পর্যাপ্ত ইনল্যান্ড জাহাজ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের লজিস্টিকস সুবিধাদি এ কার্যক্রমের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সব আমদানি-রপ্তানিকারককে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথযোগে আমদানি-রপ্তানির ধারা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/জেআইএম