অর্থনীতি

বাড়ছে স্থানীয় বিনিয়োগকারী, বিদেশিরা শেয়ারবাজার ছাড়ছেই

দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা। গত কয়েক মাস ধরে বিদেশিদের শেয়ারবাজার ছাড়ার যে ধারা চলছে তা এখনো থামেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৪ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৩১টি। আর গত তিন মাসে কমেছে ৮ হাজারের বেশি।

Advertisement

দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমলেও হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় তথা দেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। শেষ ১৪ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। অবশ্য তিন মাস আগের তুলনায় বর্তমানে শেয়াবাজারে ১ লাখের বেশি বিও হিসাব কম রয়েছে।

বিও হল শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এ বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

এ সিডিবিএলের তথ্যানুযায়ী, ২৫ আগস্ট শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫২টি। যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ৪৯৪টি।

Advertisement

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে তিনি দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর এখনো পর্যন্ত ১৪টি কার্যদিবস পার হয়েছে। এ সময়ে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান-পতন হলেও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

অবশ্য সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও, বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমতে দেখা যাচ্ছে। সিডিবিএলের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৭ হাজার ৩৩টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৮৪টি। অর্থাৎ গত ১৪ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৫১টি।

বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার এ প্রবণতা চলছে আরও আগে থেকেই। মাত্র তিন মাসের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাবে কমেছে ৮ হাজারের ওপরে। চলতি বছরের মে মাস শেষে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৪৫টি। এ হিসাবে গত তিন মাসে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৮ হাজার ১২টি।

বিদেশিদের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সিডিবিএলের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৯ হাজার ৩১২টি। যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। অর্থাৎ দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ৪৯০টি।

Advertisement

হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেলেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। তিন মাস আগে বা গত মে মাস শেষে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৯১ হাজার ২২৮টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫২টি। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৬টি।

এদিকে বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৬টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এ সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৪টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকার পতনের পর পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ৫২টি।

অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৫৯টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৪৭২টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর ১৪ কার্যদিবসে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৩৮৭টি।

হাসিনা সরকার পতনের পর নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কোম্পানির বিও হিসাবও বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ২০৭টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৫২টি। সে হিসেবে গত ১৪ কার্যদিবসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৫৫টি।

বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৯টি, যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭টি। অর্থাৎ গত ১৪ কার্যদিবসে একক নামে বিও হিসাবে বেড়েছে ৬ হজার ৮২টি।

অপরদিকে, বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮৬টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯টি। অর্থাৎ গত ১৪ কার্যদিবসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ৬৪৩টি।

এমএএস/এমএএইচ/এএসএম