লাইফস্টাইল

প্রাণঘাতী মাঙ্কি পক্স ছড়ায় যেভাবে

এমপক্স বা মাঙ্কি পক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। এতে বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া ও জ্বর হতে পারে। মাঙ্কি পক্স একটি ভাইরাসজনিত (জুনোটিক) রোগ। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি বিজ্ঞানাগারে বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত করা হয় বলে একে মাঙ্কি পক্স বলা হয়।

Advertisement

এ রোগটির প্রাদুর্ভাব ১৯৭০ সাল থেকে প্রধাণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে দেখা যায়। এর আগে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাগ দেখা গেছে।

তবে এই রোগ সর্বপ্রথম আফ্রিকার শনাক্ত হয়। এরপর মধ্য আফ্রিকার কঙ্গ, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, কেনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি এমপক্স আফ্রিকা, সুইডেনের পর পাকিস্তানেও ছড়িয়ে পড়েছে।

মাঙ্কি পক্সের লক্ষণ কী কী?

এর লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- জ্বর, মাথাব্যাথা, পেশিব্যথা, পিঠে ব্যথা, দুর্বলতা, লোসিকাগ্রন্থি ফোলা ও ত্বকের ফুসকুড়ি বা ক্ষত। বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তাহ খানেক আগে এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি দেশে এই রোগের লক্ষণ ধরা পড়েছে।

Advertisement

মাঙ্কি পক্স ছড়ায় কীভাবে?

মাঙ্কি পক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাঁটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

আরও পড়ুন

দৈনিক ১১ মিনিট হাঁটলেই সারবে ১১ রোগ, বলছে সমীক্ষা সবারই কি আক্কেল দাঁত গজায়?

চিকেন পক্সের প্রতিকার থাকলেও এই বিরল রোগের নিরাময়ের এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই বললেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে আফ্রিকায় মাঙ্কিপক্স আক্রান্তদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে।

ফলে এমপক্স (মাঙ্কি পক্স) নিয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কঙ্গোতে এর প্রাথমিক প্রাদুর্ভাগে অন্তত ৪৫০ জন মারা গেছেন। এটি এখন মধ্য পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে বিজ্ঞানীরাও উদ্বিগ্ন।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আফ্রিকা ও এর বাইরের দেশগুলোতে এমপক্স আরো ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। বিরল এই ভাইরাসের নিরাময়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি বলেইে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

এরই মধ্যে বাংলাদেশে মাঙ্কি পক্স নিয়ে উচ্চ সতর্ক অবস্থা জারি করেছে সরকার। এমপক্স (মাঙ্কি পক্স) এর লক্ষণ দেখা দিলে ১৫২৬৩ বা ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ স্বাস্থ্য অধিদফতরের।

যদিও এখনো দেশে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হয়নি, তারপরেও মাঙ্কি পক্স লক্ষণ দেখা গেলে সন্দেহভাজনদের দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হট লাইনে যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশজুড়ে মাঙ্কি পক্স সতর্কতা জারি’সহ বিমানবন্দরেও মানা হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, চলতি বছর মাঙ্কি বক্স বা এমপক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। অর্থাৎ ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে মাঙ্কি পক্স। এই ভাইরাস মোকাবেলায় মাস্ক পরার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বারবার হাত ধুতে হবে।

লেখক: কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা।

জেএমএস/এএসএম