খেলাধুলা

ডিআরএসের অভাবে পাকিস্তানকে হারাতে ২১ বছর অপেক্ষা!

গোটা দেশ আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। এ আনন্দ দেশের ক্রিকেটে নতুন সূর্য উদিত হওয়ার আনন্দ। পাকিস্তানকে প্রথমবার টেস্ট হারানোর আনন্দ। এ আনন্দ পাকিস্তানিদের ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেওয়ার আনন্দ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের টেস্ট খেলার ইতিহাস ২৩ বছরের। দীর্ঘ এই সময় শুধু একটি জয়ের অপেক্ষায় কাটিয়েছে বাংলাদেশ। অবশেষে গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে বহুল প্রতিক্ষীত সেই জয় পেল টাইগাররা।

Advertisement

কিন্তু এতদিন কেন বাংলাদেশের এই সফলতা ধরা দিলো না? বাংলাদেশ কি দুই একবার জয়ের সুযোগও করতে পারেনি?

টাইগাররা সুযোগ তৈরি করেছিল ঠিকই। কিন্তু কপালের লিখন পরিবর্তন করতে পারেনি তারা। তা না হলে অসাধারণ এই সাফল্য ২১ বছর আগেই পেতে পারতো বাংলাদেশ দল। সেদিন ভাগ্য সহায়নি টাইগারদের। সঙ্গে তখনকালীন পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামাম উল হকের অতি মানবীয় ইনিংস গড়ে দিয়েছিল পার্থক্য।

২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুলতানে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জিততে পাকিস্তানের দরকার ছিল ২৬১ রান। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে ১৫৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। অধিনায়ক ইনজামাম ছাড়া পাকিস্তানের লাইন-আপের আর কোনো ব্যাটার ছিলেন না তখন।

Advertisement

ইনজামাম ৩ স্বীকৃত বোলার সাব্বির আলী, ইয়াসির আলী আর ওমর গুলকে সঙ্গে লড়তে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত দলকেও জিতিয়ে ফেরেন তিনি। ১৩৮ রানের এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে দলকে জয় উপহার দেন ইনজামাম।

বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরে রাজ্যজয়ী বীর বনে গেলেও ইনজামামের ইনিংসটি শতভাগ নিখুঁত ছিল না। বেশ কয়েকবার লেগ বিফোর উইকেটের (এলবিডব্লিউ) জোরালো আবেদন থেকে বেঁচে যান পাকিস্তানের তৎকালীন অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার অশোকা ডি সিলভা একটু সচেতন থাকলে হয়তো ইনজমাম দল জেতানোর আগেই আউট হয়ে যেতেন সেদিন। ২১ বছর পর সেই কথা শোনা গেল খালেদ মাহমুদ সুজনের মুখে। সুজন ছিলেন ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুলতানে হওয়া সে টেস্টে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।

তখনকার অধিনায়ক আর বর্তমানে বিসিবি পরিচালক সুজনের মূল্যায়ন, মুলতান টেস্টে ডিআরএস থাকলে হয়তো জিতে যেতো বাংলাদেশ।

গতকাল রোববার বিকেলে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ের পর আনন্দের আতিশয্যেও সুজনের মুখে মুলতানের সেই টেস্টের স্মৃতি ফুটে উঠলো। তিনি বলেছিলেন, মুলতান টেস্টে ডিআরএস থাকলে ভিন্ন হতে পারতো খেলার ফলাফল।

Advertisement

সুজনের কথা শুনে অনেকের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, সেটি আসলে কীভাবে সম্ভব হতো?

ব্যাখ্যায় সুজন বলেন, ‘সেদিন পুরো ম্যাচে এলবিডব্লিউ এবং কট আউট মিলে ৩-৪টি সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে আসতে পারতো। কিন্তু ডিআরএস ছিল না বলে আমরা তা নিতে পারিনি। আমার বদ্ধমূল ধারণা, ডিআরএস থাকলে মুলতানে আমরাই জিতে যেতাম।’ ‘তখন আমরা ছিলাম টেস্টে নবীন দল। খেলোয়াড়ী জীবনের অভিজ্ঞতা কম ছিল না। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে খেলে আমরা কয়েকজন বেশ ভালোই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। কিন্তু টেস্টের অভিজ্ঞতা ছিল খুব কম। তাই জায়গামতো সঠিক কাজগুলো করতে পারিনি।’

পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামামের ১৩৮ রানের ইনিংসের বিপরীতে বাংলাদেশের অধিনায়ক সুজন ৩ উইকেট আর বাঁহাতি পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক ২টি করে উইকেট নেন। তাতে অবশ্য কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

অবশেষে গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) সেই জয় ধরা দিলো। ঐতিহাসিক এই জয়ের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুজন বলেন, আমাদের এ ম্যাচের দলটি অনেক অভিজ্ঞ। মুশফিক আর সাকিবের অভিজ্ঞতা একটা দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। মুমিনুল, মিরাজ, লিটনরাও এখন অনেক পরিণত ও অভিজ্ঞ। তাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে।’ এই সাফল্যের মিশনে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সঙ্গে সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ আর লিটন দাসের ব্যাটিং বাংলাদেশকে জয় পেতে সাহায্য করেছে।

দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের দারুণ নিয়ন্ত্রিত ও সমীহ জাগানো বোলিং এবং তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার ব্যাকআপটাও ছিল তাক লাগানোর মতো। সব মিলে দারুণ দলগত প্রচেষ্টা ও চমৎকার পারফরম্যান্স দেখা গেছে এই ম্যাচে। যার ফসল এই ঐতিহাসিক জয়।

এআরবি/এমএইচ/এমএস