খেলাধুলা

২১ বছর আগে মুলতানের সেই শোক ভুলে গেছি: সুজন

‘এতদিন মুলতান টেস্ট মানেই ছিল না পাওয়ার বেদনা। অনেক বড় প্রাপ্তিটা হয়ে আছে না পাওয়ার প্রতীক হয়ে। সত্যি কথা বলতে কি, আমার কাছে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের সাথে মুলতান টেস্টটি এতদিন পর্যন্ত শোকের প্রতীক হয়ে ছিল। কারণ, আমি বিশ্বাস করি এবং এ টেস্ট দেখা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন, সে ম্যাচটি আমাদের জেতা ম্যাচ ছিল। হয়ত টেস্টে সেটাই আমাদের প্রথম জয় হয়ে থাকতো। জিম্বাবুয়ের সাথে চট্টগ্রামে ২০০৪ সালে প্রথম টেস্ট জয়ের কয়েক মাস আগে আমরা পাকিস্তানের মত বড় টেস্ট খেলুড়ে দেশের সাথেই প্রথম টেস্ট জয় পেতে পারতাম; কিন্তু আমরা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও পারিনি। সে না পারার বেদনার কাটা মনে বিধতো এতকাল।’

Advertisement

‘বিশ্বাস করেন, সে বেদনার কাটা সরে গেছে। মনে এখন আর কোনো কষ্ট নেই। বুকের ভেতরে চাপা সেই কষ্টের পাথরটা আজ বিকেলে সরে গেল। আর কোন শোক থাকবে না। যে মুহূর্তে সাদমানের উইনিং বাউন্ডারিটি আসলো, সে মুহূর্ত থেকে আমি সেই শোক ভুলে গেছি। এখন আর মুলতান টেস্টকে শোকের প্রতীক ও না পাওয়ার বেদনার স্মৃতি ভাববো না। সে শোক ভুলে যাব। মনের সব দুঃখ, কষ্ট ও না পাওয়ার বেদনা ভুলে এবং সব শোক কাটিয়ে আমার মনে এখন আনন্দের ফলগুধারা বইছে। এখন আমি রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলেন খালেদ মাহমুদ সুজনের। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। আজ রোববার বিকেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক ও অবিস্মরনীয় জয়ের পর জাগো নিউজের সাথে মুঠোফোন আলাপে এক নিঃশ্বাসে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক।

সুজন এমন কথা বলতেই পারেন। কারণ ইতিহাস সাক্ষী, আজ থেকে ২১ বছর আগে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুলতানে এই পাকিস্তানকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। ক্রিকেটের পরাক্রমশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে সে টেস্টে প্রায় সমানতালে লড়াই করে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন, মঞ্জুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ রফিক, জাভেদ ওমর, হান্নান সরকার, হাবিবুল বাশার সুমন, মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজিন সালেহ, তাপস বৈশ্য ও অলক কাপালিরা।

Advertisement

খালেদ মাহমুদ সুজন ছিলেন ওই দলের অধিনায়ক। খুব স্বাভাবিকভাবে জয়কে খুব কাছ থেকে দেখেও স্পর্শ করতে না পারার বেদনাটা অধিনায়ক সুজনের মনেই ছিল বেশি। মুলতানে ওই টেস্ট জিততে না পারার কারণে সুজনের কান্নার ছবি এখনও হৃদয়ে ভাসে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের। টেস্ট ক্রিকেটের নবীন দল বাংলাদেশের বিপক্ষে মুলতানে জিততে পাকিস্তানীদের দরকার ছিল ২৬১ রানের। খালেদ মাহমুদ সুজন (৩/৬৮), মোহাম্মদ রফিক (২/৮০) ও পেসার মঞ্জুরুল ইসলামের (২/৬৪) সাঁড়াসি বোলিং আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তান এক পর্যায়ে ৯৯ রানে ৫ আর ১৬৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল।

ইনজামাম-উল হক, ইউনিস খান, মোহাম্মদ হাফিজ, সালমান বাট, ইয়াসির হামিদ, রশিদ লতিফ, সাকলায়েন মোশতাক, ফারহান আদিল, সাব্বির আহমেদ, ওমর গুল ও ইয়াসির আলীর মত পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমারে গড়া ছিল পাকিস্তান দল। সব প্রতিষ্ঠিত ও পরিণত ব্যাটার সাজঘরে ফেরত গেলেও একা একদিক আগলে রেখে পাকিস্তানকে ১ উইকেটের অতি নাটকীয় জয় উপহার দিয়ে বসেন অধিনায়ক ইনজামাম-উল হক। ১৩৮ রানের অতিমানবীয় ইনিংস বেরিয়ে আসে ইনজামামের ব্যাট থেকে।

বাংলাদেশের বোলাররা পাকিস্তানের বাকি সব ব্যাটারকে আউট করতে পারলেও ইনজামামকে সাজঘরে ফেরত পাঠাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ইনজামামের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে লড়াকু ও সংগ্রামী ইনিংসের কাছেই হার মানতে হয় বাংলাদেশকে। না হয় ২০০০ সালের নভেম্বরে টেস্ট অভিষেক হওয়া বাংলাদেশ ৩ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই টেস্টে প্রথম জয়ের স্বাদ পেতে পারতো।

২১ বছর পর সেই অপূর্ণতাকে পরিপূর্ণ করেছে টাইগাররা। নাজমুল হোসেন শান্তর অধিনায়কত্বে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মুমিনুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন দাস, সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানারা সেই পাকিস্তানের মাটিতে ব্যাট ও বলে অনেক ভাল খেলে এবার দেশকে উপহার দিলেন ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়।

Advertisement

দুই দশকেরও বেশি সময় পর ধরা দিয়েছে। তাতে কি! পাকিস্তানীদেরকে তাদেরই মাটিতে হারানোর অধরা কৃতিত্বটা ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। সেটাইতো অনেক বড় প্রাপ্তি। অনেক বড় কৃতিত্ব। বড় অর্জন।

এআরবি/আইএইচএস