দেশজুড়ে

তিনদিন ধরে রাস্তায় আটকা শত শত চালক-যাত্রী

বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল হুদা শুক্রবার ভোরে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসে উঠেন চট্টগ্রাম শহরের একেখাঁন থেকে। শনিবার দুপুরে তিনি কুমিল্লায় পৌঁছান। তাও উল্টো পথে। এরপরই আটকে যান। রাস্তায় দীর্ঘ যানের সারি। কেউ কোথায় যেতে পারছেন না। আজ দুদিন ধরে রাস্তায় থেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নুরুল হুদা। এখন তিনি কোনদিকে যাবেন, কী করবেন- কিছুই বুঝতে পারছেন না।

Advertisement

শুধু নুরুল হুদা নয়, গত তিনদিন ধরে এভাবে অভাবনীয় ভোগান্তিতে রয়েছেন শত শত যাত্রী ও চালক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামমুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকামুখী লেনে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ যানজট। শুধুমাত্র বন্যার্তদের জন্য যাতায়াত করা উদ্ধার ও খাবারের গাড়ি যেতে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন কাভার্ডভ্যান চালক ইখলাস মিয়া। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্লাবিত হলে আটকে যায় মোখলেসের কাভার্ডভ্যান। তিনদিন ধরে তিনি মহাসড়কের ফেনী অংশের ধুমঘাট এলাকায় যানজটে আটকে আছেন।

তিনি বললেন, তিনদিন ধরে এক জায়গায় আটকে আছি। আমি আর আমার সহকারী আছি। খাবার আর পানির কষ্ট। আশপাশের দোকানও খোলা নেই।

Advertisement

লরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, এ সড়কে প্রায় ৮ বছর ধরে গাড়ি চালাই। কোনোদিন এমন ভয়াবহ যানজটে পরিনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা অনেক কষ্টের। মোবাইলেও চার্জ দিতে পারছি না। একজনের মাধ্যমে অল্প চার্জের ব্যবস্থা করেছি।

মিরসরাই পৌর সদরে কথা হয় আরেক ট্রাকচালক মনিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত ধরে ডাকাতি আতঙ্কে ছিলাম। একেতো যানজটে আটকা তিনদিন ধরে, তার ওপর ডাকাত আতঙ্ক। গাড়ি রেখে কোথাও যেতে পারছি না। পণ্য নিয়ে যেতে হবে নারায়ণগঞ্জ। কখন পৌঁছাবো বুঝতে পারছি না।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কপথে পণ্য আনা-নেওয়ার একমাত্র পথ এটি। তিনদিন ধরে মহাসড়কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, মিনি ট্রাক।

হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে চার ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছিল। তীব্র স্রোতও ছিল। মিরসরাইয়ের ধুমঘাট থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় লেনে যান চলাচল প্রায় বন্ধ। মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া মহিপাল পর্যন্ত যানজট ছিল। মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

Advertisement

ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ চৌধুরী জানান, মহাসড়কের এ অংশে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তীব্র স্রোতের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। এখানে অন্তত চার ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যান চলাচল কবে স্বাভাবিক হবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি সোহেল সরকার জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যানজট হয়েছে। কাজ করেও লাভ হয়নি। সড়ক থেকে পানি সরে গেলে স্বাভাবিক হবে।

এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/জেআইএম