কৃষি ও প্রকৃতি

বন্যার পরে কৃষকের করণীয় কী?

চলমান বন্যায় দেশের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কৃষি জমি। জমির শাক-সবজি, ধানসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কোনো কোনো ফসলের হয়তো অস্তিত্বই পাওয়া যাবে না। ফলে কৃষকদের এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে এ সময়ে আসলে করণীয় কী, তা নিয়েও ভাবতে হবে।

Advertisement

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা আংশিক হয়েছে এমন জমির ক্ষেত্রে বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি এবং আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। পানি সরে যাওয়ার পর ৫-৭ দিন কাদাযুক্ত ধানগাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সার দেওয়া ঠিক নয়। এতে ধানগাছ পচে যেতে পারে। ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘাপ্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশিয়াম দিতে হবে।

যেখানে বন্যার পানি ওঠেনি; সেখানে বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০-৪০ দিন পর) থেকে ২-৩টি কুশি রেখে বাকি কুশি শিকড়সহ তুলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্ষেতে রোপণ করতে হবে। উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ায় বীজতলা করা সম্ভব না হলে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করতে হবে।

পানি নেমে যাওয়ার পর আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর-৫, বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৪৬, ব্রি ধান-৫৪ এবং নাজিরশাইলসহ স্থানীয় জাত রোপণ করতে হবে। এ ছাড়া স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ব্রি ধান-৫৭ ও ব্রি ধান-৬২ও রোপণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে। দেরিতে রোপণের ফলে দ্রুত কুশি উৎপাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ দুই তৃতীয়াংশ ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন দেশের কৃষিতেও পরিবর্তন আসুক বাগেরহাটে বছরে সবজি উৎপাদন হাজার কোটি টাকার

যেসব এলাকা উঁচু ও মধ্যম উঁচু; সেসব জমিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫-৭ দিন আগাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধানগাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন- আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্যার পরে চারাগাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। এ সময়ে গাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা-পিঠ ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাতজাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করতে হবে। এ ছাড়া বিস্তারিত তথ্যের জন্য কাছের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

এসইউ/এএসএম

Advertisement