দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)। সংকটাপন্ন বন্যা কবলিত এসব এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি সব ধরনের মানবিক সহায়তা দানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সোসাইটির যুব স্বেচ্ছাসেবকরা। এরই মধ্যে পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ, জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসাসেবাসহ প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তা প্রচার করছে তারা।
Advertisement
বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ২২ আগস্ট থেকে বিডিআরসিএস’র পক্ষ থেকে ফেনীতে ২টি ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার থেকে নোয়াখালী ও কুমিল্লাতে আরও ৩টি ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হবে।
এরই মধ্যে বন্যা উপদ্রুত জেলাগুলোর জন্য ২ হাজার পরিবারের জন্য ৭ দিনের ফুড প্যাকেজ (৭.৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১টি লবণ কেজি, ১ লিটার সয়াবিন তেল ও ৫০০ গ্রাম সুজি) বরাদ্দ দিয়েছে সোসাইটি, যা সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়া সাপেক্ষে পাঠানো হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে ৩ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার (৩ কেজি চিড়া, ১ কেজি চিনি, ২৫০ গ্রাম বিস্কুট, ২ লিটার পানি, ১০টি খাবার স্যালাইন, ৬টি মোমবাতি ও ১টি দিয়াশলাই) বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সোসাইটির এছাড়াও কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম ইউনিটের নিজস্ব উদ্যোগে এবং জাতীয় সদর দপ্তরের সহায়তায় রান্নাকরা ও জরুরি শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী জানান, আকস্মিক বন্যায় দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে আমরা আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছি।
Advertisement
সোসাইটির উদ্যোগে এরই মধ্যে ইউএসএইডের এর অর্থায়নে আইএফআরসির মাধ্যমে ২৫০,০০০ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ৭,৫০০ পরিবারের মধ্যে ৭ দিনের ফুড পার্সেল এবং ৩,০০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৬,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আমেরিকান রেড ক্রস ও সুইডিস রেড ক্রস থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকার আথিক সহায়তা পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোয় ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৭ দিনের ফুড প্যাকেজ প্রদানে সম্মত হয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী পানযোগ্য নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের জন্য প্রয়োজনীয় সব খরচ বহন করবে এই টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি। বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিডিআরসিএসকে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ কোট ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেবে।
চলমান বন্যায় সোসাইটির অধিক সংখ্যক বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সোসাইটির পক্ষ থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই চলমান সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, দানশীল ব্যক্তি ও প্রবাসীদের কাছ থেকে সহায়তার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। বিকাশ অথবা সোসাইটির ওয়েবসাইটের ভিজিট করে ডোনেট করা যাবে। রেড ক্রিসেন্ট’র বিকাশ নম্বর- ০১৮১১৪৫৮৫২১ এবং ওয়েবসাইট: bdrcs.org/donate-online।
সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম জানান, বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিটগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেচ্ছাসেবকরা আন্তরিকতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করছে। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্যার্তদের মানবিক সহায়তা দেওয়া ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে বরাবরের মতই আছে রেড ক্রিসেন্ট। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত ১৫ জেলায় ইউনিট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল না ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
এএএম/এমআইএইচএস/এএসএম